Wednesday, September 14, 2011

বাংলা মুভি বাংলা রিভিউ- “গেরিলা”

৪০ টি বছর পার হয়ে গেল। এখন ঐসব অতীত নিয়ে কী পরে থাকতে হবে নাকি?? ঐসব যুদ্ধাপরাধী আংকেল-দাদুগুলিকে মারলে তো আমার কালকের পরীক্ষায় পাস হয়ে যাবে না কিংবা বিদেশ থেকে কোম্পানীর অর্ডারটাও পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের প্রতিটি সমাজের মধ্যে যখন চলে এসেছিল মুক্তিযুদ্ধকে ভুলে যাবার মনোভাব তখন উচিত সময়ে উপস্থিত এক অসাধারণ চলচ্চিত্র “গেরিলা”। গেরিলাকে আমি কোন মুভি বলতে চাই না। এটি যেন ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের এক দলীল। সমস্ত যুদ্ধের ভয়াবহতার এক পুর্ণাঙ্গ চিত্র প্রকাশিত হয়েছে মুভিটিতে।
কাহিনী জানা যাক। ১৯৭১ এর একজন সাধারণ নারী বিলকিস বানু ( জয়া আহসান) । ২৫ শে মার্চ তার স্বামী হাসান (ফেরদৌস) নিখোঁজ হবার পর সে যোগ দেয় মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধাদের অর্থ যোগান, অস্ত্র সরবরাহ এমনকি আলতাফ মাহমুদের দেয়া গানের স্পুল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পৌছে দেবার কাজে সে সুনিপুণ। ছদ্মবেশে এক পাকিস্তানী জাকজমকপূর্ণ পার্টিতে বোমা স্হাপন করে বিলকিস। সবকিছু ঠিকঠাক মতই চলছিল। কিন্তু এক মুক্তিযোদ্ধা তার সমস্ত সহযোগীদের নাম বলে দিলে ঘন বিপদ এসে নাড়া দেয় বিলকিসের দ্বারে। বিলকিস তার শ্বশুড়বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যায় তার বাপের বাড়ী। কিন্তু দেশ তো আর আগের মত নেই। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। মাঝপথে ট্রেন বন্ধ। কারণ সামনে ব্রীজ ভাঙা। হাঁটা দেয় বিলকিস। সবুজ বাংলাদেশের পথে হাঁটতে গেলে লাশের স্তুপে হোঁচট খেতে হয়। নৌকায় নদী পার হতে গেলে দেখা যায় লাশ ভেসে আছে। গ্রাম গঞ্জে রাজাকার গুলি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে মা-বোনদের হানাদার বাহিনীর তেষ্টা মেটাবার জন্য। বিলকিস বাসায় পৌছাতে সাহায্য করে সিরাজ। সে এক মুক্তিযোদ্ধা । বিলকিসের ভাই খোকনও এক মুক্তিযোদ্ধা। খোকন বাহিনীর জ্বালায় নাকানি-চুবানি খাওয়া অবস্থা পাকিস্তানীদের। কিন্তু রাজাকারদের সাহায্যে ধরা পরে খোকন এবং রাজাকারদের দ্বারা নৃশংসভাবে নিহত হয়। বিলকিস খোকনের লাশ খুঁজতে গিয়ে ধরা পরে পাক-বাহিনীর কাছে। কিন্তু পাকবাহিনীর ক্যাপটেন শামসাদ হয়তো ভাবতেও পারেনি যে টেবিলের উপর রেখে দেয়া গ্রেনেডটি তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়াবে।
আগেই বলেছি মুভিটি একটি পূর্ণাঙ্গরুপে ৭১ এর ছবি। মুভিটিতে যুদ্ধের ভয়াবহতে একেবারে পুরোপুরিভাবেই দেখানো হয়েছে। প্রথম ভাগে শহর ভিত্তিক যুদ্ধ এবং শেষভাগে গ্রামভিত্তিক। সকল ক্ষেত্রেই রাজাকারদের সাহায্যের নমুনা দেখে অবাক হয়ে যেতে হয় এবং খালি মনে হয় এরাও মানুষ?? মুভিটিতে আলতাফ মাহমুদ ( আহমেদ রুবেল) , রুমি , বদির মতো সত্য চরিত্র দেখানো হয়েছে। সকলের অভিনয় অসাধারণ। প্রত্যেকের পারফর্ম্যান্স দেখেই বোঝা যায় যেন সকলের চোখে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চিত্র দেখাবার জন্য এক জ্বালা ছিল । বিলকিসের ভাসুর সমাজের প্রভাবশালি তসলিম সর্দার ( এটিএম শামসুজ্জামান) এর চরিত্রটি সবার নজর কেড়েছে। এছাড়া আজাদ আবুল কালাম সহ প্রত্যেক রাজাকার চরিত্রের অভিনয় অভিনয় শিল্পীরা এতটাই ভালো অভিনয় করেছে যে সবাই ওদের থুতু মারতে উদ্যত হবে।
মূল চরিত্রে জয়া আহসানের অভিনয় বরাবরের মত অসাধারণ। জয়া আবারো প্রমাণ করলো যে সেই বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সেরা অভিনেত্রী। খল চরিত্রে শতাব্দী ওয়াদুদের অভিনয় দেখে সত্যি অবাক হতে হয়।
তবে মুভিটির নির্মাণ ছিল এক কথায় অসাধারণ। ৭১ এর মুভি বানানো সম্ভব, কিন্তু ৭১ এর বাংলাদেশ দেখানো সম্ভব নয়। সেই অসাধ্যটি সাধন করেছে পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দীন ইউসুফ। পাকিস্তান রেলওয়ের ট্রেন বলুন কিংবা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশে সবুজ গ্রাম বলুন। সবকিছুই অসাধারণ। শতাব্দী ওয়াদুদকে দুটি চরিত্রে অভিনয় করানো হয়। দুটি পুরোপুরি দুজনকে দিয়ে করানো সম্ভব থাকলেও সব হানাদারদের চেহারা একই রকম হয় এটা দেখাতেই হয়তো তাকেই দেয়া হয়েছে। তবে দুটো চরিত্রেই দারুন করেছে শতাব্দী ।
মুভিটিতে ভয়াবহ ধরণের নৃশংসতা দেখানো হয়েছে যেটার বর্ণনা এখানে দিতে চাই না। মুভিটির কিছু কিছু দৃশ্য গায়ের লোম খাড়া করে দেয়। যেমন আলতাফ মাহমুদের দাড়িয়ে উঠে বলা: “আমি আলতাফ মাহমুদ!” কিংবা তসলিম সর্দারের শান্তি কমিটিতে যোগদানে অপরাগতা। দুধওয়ালা নরেন যখন বলে : “এদেশ ছেড়ে কোথায় যাবো??” এটা শুনে সকলেরই চোখে পানি চলে আসে।
মুভিটির খারাপ দিক নিয়ে একেবারে কম আলোচনা করবো। মুভিটির প্রথম ভাগে এডিটিং একটু খারাপ । যে দৃশ্যটা অসাধারণ হবার পথে চলছিল সেটি হঠাৎ করে শেষ হয়ে পরবর্তী দৃশ্য চলে আসে। মুভিটির গতি তখন অত্যাধিক মাত্রায় বেশী ছিল ফলে কোন কোন ঘটনার শেষ ফলাফল বোঝা যায় না। এছাড়া মুভিটির আবহ সংগীত আরেকটু ভালো হওয়া আশা করেছিলাম।
এ মুভিটি নিঃসন্দেহে সকল বাংলাদেশীর প্রাণের ছবি। সকলেরই উচিত মুভিটি অন্তত একবার দেখা। এবং মুক্তিযুদ্ধ কে আরো ভালো ভাবে জানা। আমরা আশা করবো এরকম মুভি যেন আরো বানানো হয় যেন আমাদের মন থেকে সেই গানটি ভেসে উঠে: “আমরা কোন দিন ভুলবোনা ... ...”।
রেটিং- ৫/৫

No comments:

Post a Comment

ওয়ানপ্লাসের নতুন অক্সিজেন ওএস ১৫ আসছে AI নিয়ে

  অ্যান্ড্রয়েড ১৫  এর ওপর ভিত্তি করে আসছে  ওয়ানপ্লাসের  অক্সিজেন    ওএস  ১৫। অক্টোবরের ২৪ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত ৯:৩০ এ আনুষ্ঠানিকভাবে অপ...