Monday, October 24, 2011

লিভ টুগেদার’ বাড়ছে: ধ্বংস হচ্ছে পারিবারিক মূল্যবোধ


‘লিভ টুগেদার’ বাড়ছে: ধ্বংস হচ্ছে পারিবারিক মূল্যবোধ ।:-*
রাজধানীতে ‘লিভ টুগেদার’ প্রবণতা উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে। বিয়ে ছাড়া ‘দাম্পত্য’ সম্পর্ক তৈরি করে বছরের পর বসবাস করছেন অসংখ্য নারী-পুরুষ। এদের মধ্যে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, চাকরিজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, শিল্পী, সাহিত্যিক, ও সাংস্কৃতিক জগতের অনেকই রয়েছেন। এছাড়া ভিন্ন ধর্মাবলম্বিদের মধ্যে ধর্মান্তরিত না হয়ে বিয়ে করতে সমাজে বাধা থাকায় অনেক ...জুটি লিভ টুগেদার করছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেও লিভ টুগেদারের প্রবণতা অতিমাত্রায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিয়ে না করে তারা বাসা বা ফ্ল্যাট ভাড়া নিচ্ছেন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে। আবার লিভ টুগেদারের নামে অনেক সময় প্রতারণার ঘটনাও ঘটছে। সিথি ও সৈকত। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর শিক্ষার্থী। কাঁঠালবাগান এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন। দুটি রুম সাবলেট দিয়েছেন ছাত্রী ও কর্মজীবী মহিলাদের। ভাড়াটিয়াদের একটি সূত্র জানায়, সিথি ও সৈকত লিভ টুগেদার করছেন। সিথির দায়িত্ব বাসা ভাড়ার টাকা দেয়া। দুই রুমের ভাড়া মাসে ১২ হাজার টাকা পান। আর আড়াই হাজার টাকা নিজের থেকে দিয়ে ফ্ল্যাটের সাড়ে ১৪ হাজার টাকা ভাড়া পরিশোধ করেন। সৈকত খাওয়া, জামাকাপড়সহ সংসারের যাবতীয় খরচের যোগান দেন। এভাবেই চলছে তাদের বিয়ে ছাড়া ‘দাম্পত্য’ জীবন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী এবং একজন এডভোকেট (যিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র) ২০০৮ সালের ১৫ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিনমাস লিভ টুগেদার করেন। ২০১০ সালের ৫ জুলাই তাদের মধ্যে সর্বশেষ দৈহিক সম্পর্ক হয়। এরপর একে অপরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগে দু’জনই লিভ টুগেদারের বিষয়টি উল্লেখ করেন। শাহবাগ থানায় ২০১০ সালের ৫ আগস্ট একটি জিডিও করেন ওই ছাত্রী। অভিযোগে ছাত্রী লিখেছেন, ২০০৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ওই ছাত্র উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে এক বাসায় নিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এরপর তাকে মেনে নেয়ার চেষ্টা করেন ওই ছাত্রী। এক পর্যায়ে মৌখিকভাবে কলমাও পড়েন দু’জন। এরপর ওই ছাত্রী একদিন জানতে পারেন ওই আইনজীবী আগেও একটি বিয়ে করেছিলেন। ওই স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। অভিযোগে ছাত্রী আরো বলেন, সবকিছু জেনেও আমি মেনে নিয়ে তাকে মানসিক ও আর্থিক সবদিক থেকে সাহায্য করেছি। এক পর্যায়ে সে ব্যবসার নামে আমার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু সে টাকা দিয়ে কোন ব্যবসা তো করেই নি বরং আমার কাছ থেকে আরো টাকা পয়সা নিয়ে যায়। সে টাকাও ফেরত দেয়নি। সংসার করতে হলে ন্যূনতম একটা আর্থিক সাপোর্ট লাগে তা তার ছিল না। তাকে যে কোন একটি কাজ খুঁজে নেয়ার তাগাদা দেয়ায় সে আমাকে সন্দেহ করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমি এতোটা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি যে তার সঙ্গে সংসার করার আর কোন ইচ্ছাই নেই। সে ১১ জুলাই মৌখিকভাবে তালাকও দিয়েছে। অন্যদিকে ওই সাবেক ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এক অভিযোগে লিখেছে ওই ছাত্রী তার স্ত্রী। বিয়ের আগে তিনমাস তারা লিভ টুগেদার করেছে। গত কয়েকমাস ধরে সে ল-নপ্রবাসী সহপাঠীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। তা আমি জানার পর দু’জনের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রায়ই এরকম লিভ টুগেদারের অভিযোগ জমা পড়ছ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র প্রণব দাস বাবলুর সঙ্গে ঢাকা সিটি কলেজের ছাত্রী ফারাহ বিনতে রশিদ অপর্ণার পেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১০ সালের ১৫ মে আজিমপুরের শেফালী গার্ডেনের তৃতীয় তলার একটি বাসা ভাড়া নিয়ে লিভ টুগেদার শুরু করে। অর্পণার পরিবার জানতো সে আজিমপুরের একটি ছাত্রী হোস্টেলে থাকে। অর্পণা ও বাবলু ভিন্ন ধর্মাবলম্বি হওয়ায় দু’জনের মধ্যে সন্দেহ লেগেই থাকতো। অপর্ণা বাবলুকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার বলত। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। গত ১৫ অক্টোবর ওই বাসায় বাবলুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় অপর্ণাসহ ৫জন গ্রেফতার হওয়ার পর প্রকাশ পায় লিভ টুগেদারের কাহিনী। সূূত্র জানায়, ইদানিং লিভ টুগেদারের ধরন পাল্টেছে। আগে দু’জন একসঙ্গে থাকতেন। এর বাইরে আর কোন সম্পর্ক রাখতেন না। এখন অনেকেই একাধিক সম্পর্ক রাখছেন আবার লিভ টুগেদার করছেন। যখন যাকে ভালো লাগছে তার সঙ্গেই থাকছেন। আবার অনেকে অর্থের অভাবে ও বয়সের কারণে বিয়ে করতে না পেরে লিভ টুগেদার করছেন। অপর একটি সূত্র জানায়, লিভ টুগেদার করা জুটির মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ সংসারের অধিকাংশ খরচ বহন করে। কোন কোন ক্ষেত্রে নারী সঙ্গীও খরচ ভাগাভাগি করেন। লিভ টুগেদার যারা করেন তাদের বেশিরভাগই পরিচয় গোপন করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিচ্ছে। বাসা ভাড়া নেয়ার সময় তারা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেয়। কোথাও ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকলে তারা ওই বাসা ছেড়ে দেয়। উচ্চ আকাঙ্খা বেশি এমন মেয়েদের মধ্যে লিভ টুগেদারের প্রবণতা বেশি। আর পুরুষরা মানসিক ও জৈবিক শান্তির জন্য নির্ঝাঞ্ঝাট সঙ্গীর সঙ্গে লিভ টুগেদার করে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, বর্তমানে লিভ টুগেদার অনেক বেড়ে গেছে। ১৫-২০ বছর পর এটি এমন পর্যায়ে যাবে যা বিয়ে নামক সম্পর্ককে ব্যাপক ধাক্কা দেবে। এখন মানুষ সাংসারিক জীবনে আবদ্ধ হয়ে নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করতে চায় না। একই সঙ্গে তারা জীবনকে উপভোগ করতে চায়। এ কারণে বিয়ে না করে তারা লিভ টুগেদার করছে। তবে আধিপত্য, ক্ষমতার বৈষম্য ও আর্থিক বিষয়গুলো চলে এলে সম্পর্ক নষ্ট হয়। ঘটে আত্মহত্যা ও হত্যাসহ নানা অপরাধঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী বলেন, লিভ টুগেদার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌছেছে। লিভ টুগেদার করে নর-নারী জীবনকে সাময়িক উপভোগ করে থাকেন। কিন্তু এটি স্থায়ী কোন সমাধান নয়। এর ফলে মানুষ পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। বিয়ের মাধ্যমে নর-নারীর সুশৃঙ্খল দাম্পত্য জীবন যাপনের পরামর্শ দেন তিনি।

No comments:

Post a Comment

ওয়ানপ্লাসের নতুন অক্সিজেন ওএস ১৫ আসছে AI নিয়ে

  অ্যান্ড্রয়েড ১৫  এর ওপর ভিত্তি করে আসছে  ওয়ানপ্লাসের  অক্সিজেন    ওএস  ১৫। অক্টোবরের ২৪ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত ৯:৩০ এ আনুষ্ঠানিকভাবে অপ...