ঈদ উৎসব আমাদের জাতীয় জীবনে একটি বড় উৎসব। প্রতিটি মুসলমানের প্রিয় উৎসব। বহুকাল ধরে এটি প্রথা আকারে আমাদের দেশে বর্তমান। এখন এটি এতটাই আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে যে তা কেবল ধর্মী নির্দেশ হিসেবে নেই। আর সমস্যাটা ঠিক এ জায়গাতেই । যখন কোন কিছু অভ্যাসে ও প্রথায় দাড়িয়ে যায় তখন সেটি আমাদের যুক্তি ও বুদ্ধির বোধ থেকে উৎসারিত হয় না। কোন এক ফরাসী পণ্ডিত বলেছিলেন, আপনি অন্যসব কিছু ভুলে যাওয়ার পর যা থাকে তাই হচ্ছে সংস্কৃতি। সুতরাং, বুঝাই যাচ্ছে চেতন সচেতনতার বা যুক্তি-বুদ্ধির সংযোগ খুব একটা নেই এর সাথে।
যে বিপদের কথা বলেছিলাম সেই বিপদের শুরু এখান থেকেই । একটু ব্যাখ্যা করি। ঈদ উৎস একটা ধর্মীয় আচরণ। ধর্ম একটা বিশ্বাসের ব্যাপার। আর বিশ্বাসটা শুরু হয়– সব ধর্মের ক্ষেত্রে – মানুষের জন্য কল্যান বোধ দিয়ে। মানুষ এই কল্যানবোধের প্রতি আকৃষ্ট হয়েই এক সময় ধর্মকে গ্রহনে আকৃষ্ট হয়। কিন্তু ধর্মটি যখন একটা আচার প্রথা বা সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে যায় তখন এর কল্যাণ বোধের জায়গাটা হতে থাকে অস্পষ্ট, পরে অস্পষ্ট থেকে লুপ্ত ও বিলুপ্ত। অর্থাৎ যে কল্যানবোধ ছিলো ধর্মের লক্ষ্য সেই লক্ষ্যটাই হারিয়ে যায়। এটা কেল ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রেই নয়, সব ধর্মের ক্ষেত্রেই এটাই ঘটে এবং ঘটেছে।
এখন এই যে, ধরা যাক বলীদান বা কোরবানি। এটা অনেক পুরোনো প্রথা ; প্রাকইসলামি যুগ থেকেই চলে আসছে। এই কোরবানির মূল কথাটা হচ্ছে ত্যাগ। অর্থাৎ ত্যাগটাকে আমি কতটা আন্তরিকতার সাথে করতে পারি। যে জিনিসের প্রতি আমার সামান্য আকর্ষণ আছে সেটাকে ত্যাগ করা কঠিন নয়। যে জিনিসের প্রতি আমার বেশ আকর্ষণ আছে তাকেও ত্যাগ করা কঠিন নয়। কিন্তু যে জিনিসের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক অর্থাৎ তাকে যদি আমার আত্মজ বলা হয়, তাকে ত্যাগ করা মানে সর্বোচ্চ ত্যাগ। সেই সর্বোচ্চ ত্যাগ করার জন্যই তো এই ধর্মীয় নির্দেশটা এসেছিল। আল্লাহ যখন দেখলেন নবীজি তার ছেলেকে কোরবানি দিতে দ্বিধা করছে না তখন তিনি নবীজির ত্যাগের আদর্শে সন্তুষ্ট হয়ে একটি পশু কোরবানি দিতে বললেন।
আমরা এই ত্যাগের আদর্শে কতটা উদ্বুদ্ধ? আমরা ত্যাগের দিকে না গিয়ে কেবল পশুটিকেই বেছে নিয়েছি। এটা বলতে খুব সংকোচ হয়,তবু না বলে পারছি না : ঢাকা শহরে এই এত এত কোরবানি হয় তা কতটা সেই আদর্শে হচ্ছে তা কিন্তু প্রশ্নসাপেক্ষ। যে-পশুগুলোকে কোরবানি দেয়া হচ্ছে তারা কি ইসলাম-বর্ণিত নবীজির আত্মজ-তুল্য প্রিয় বস্তু না শুধুই প্রদশর্নী ? গরুটি যদি দীর্ঘদিন আমাদের সানিধ্যে থাকে, এই দীর্ঘ সানিধ্যের কারণে সে প্রিয় উঠবে; তবেই না সত্যিকারের আদর্শের প্রতিফলন ঘটবে। সেটা কিন্তু ঘটে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যিনি কোরবানি দেন , তিনি হয়তো নিজে গিয়ে কিনে আনার সময় পান না। বা পেলেও সেটা একদিন দুইদিন আগে কেনা হয়। সুতরাং এর সাথে সান্নিধ্যের বা প্রিয় হয়ে ওঠার সুযোগ থাকছে না।
আদর্শের সংযোগও এর সাথে খুব একটা নেই। এটি একটি অচেতন প্রথা হয়ে দাড়িয়েছে। কে কত বড় গরু কোরবানি দিল সেটাও একটা আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। আবার যারা কম পয়সাওয়ালা তাদের অনেকে তো দেখেও না কোন গরুটি কোরবানি দেয়া হলো ; বলে ওমুকের সাথে ভাগে কোরবানি দেয়া হয়েছে। সুতরাং, এতে ত্যাগের কোন আদর্শ আছে বলে আমার মনে হয় না। আমি জানি, একথা বলায় অনেকেই আমার সমালোচনা করবেন। কিন্তু লক্ষ্য করে দেকুন তো, এ রকমই ঘটছে কিনা ? এতো গেল একটা দিক। এর বাইরে আরেকটা বীভৎস দিকও আছে। ঈদের দিনটি, যে-দিনটি হবে আনন্দের, উৎসবের, ছোট ছোট শিশুদের জন্য যে-দিনটি হওয়া উচিৎ দৃষ্টিনন্দন; সেদিনটি হয়ে ওঠে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ পশুর কোরবানির ফলে বীভৎস, আতংকময়, বিশ্রী এবং পরবর্তীতে পুতিগন্ধময়। এই দৃশ্যটা চোখের জন্য এক সীমাহীন অত্যাচার। শিশুরা যখন এই দৃশ্যটা দেখে তখন তা চেতনে বা অবচেতনে তার স্মৃতিকোষে গিয়ে জমা হয়। শিশুর মনগঠনে এর একটা প্রভাব নিশ্চয়ই পরে। আমাদের সমাজে সহিংসতা, রূঢ়তা , নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা আর নির্দয় ঘটনার এত যে ছড়াছড়ি – এর পেছনে ছোট ছোট শিশুদেরকে এই জবাই করার মতো দৃশ্যের সাথে পরিচয় করানোর সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে হয়। শিশুদের কোমল মনে এই প্রচণ্ড দৃশ্য কোন প্রভাব ফেলে না– এটা কিন্তু বলা যাবে না।
আমি মনে করি জবাই করা এবং মাংশ কাটাবুটির কাজটা প্রকাশ্যে না করে আড়ালে করলে ভালো হয়। অন্তত শিশুদের সামনে নয়। নবীজিও তো কাজটা লোকালয়ে বা প্রকাশ্যে জণসম্মুখে করেন নি; তিনি নিজের প্রিয় বস্তু আত্মজকে লোকালয়ের বাইরে এক নির্জন যায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন। এই উদাহরণটি ধর্মীয় কাহিনী হিসেবে থাকা সত্ত্বেও আমরা অনুসরন করি না। ধর্মের মর্মে না গিয়ে শুধুই খোলসটুকু নিয়ে পরে আছি।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
ওয়ানপ্লাসের নতুন অক্সিজেন ওএস ১৫ আসছে AI নিয়ে
অ্যান্ড্রয়েড ১৫ এর ওপর ভিত্তি করে আসছে ওয়ানপ্লাসের অক্সিজেন ওএস ১৫। অক্টোবরের ২৪ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত ৯:৩০ এ আনুষ্ঠানিকভাবে অপ...
-
আপনার মোবাইল পানিতে পড়ে গেলে যত তারাতারি সম্ভব আপনার মুঠোফোনটিকে পানি থেকে তোলার ব্যবস্থা করুন। মনে রাখবেন, যত দেরী হবে আপনার মুঠোফোনটির ...
-
(Install K lite Codec - For Download K-Lite Codec Pack 7.1.0 Full/ Corporate/ Standard...
-
নতুন অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন কেনার পর এই অ্যাপ গুলো আপনার ফোনে না থাকলেই নয়। তো চলুন দেখে নিই অ্যান্ড্রয়েড এর কিছু বেসিক অ্যাপ … Andr...
No comments:
Post a Comment