Tuesday, January 10, 2012

নিজের চিকিৎসা নিজেই করুন

১. দৈনিক চারটি নিয়ম অবশ্যই মেনে চলুন। এগুলো হলো-খাবারের তালিকায় তাজা ফল ও সবজি রাখুন, নিয়মিত হাঁটুন অথবা ব্যায়াম করুন, কমপক্ষে ১৫ মিনিট হাসুন এবং খাদ্য তালিকায় শস্য ও সিমজাতীয় অত্যাধিক অাঁশসমৃদ্ধ খাবারের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। তবে এসব নিয়ম মানার পর দিনের বাকি সময় যদি ধূমপান, মদ্যপান আর চকলেট খেয়ে পার করেন তাহলে সবই বিফলে যাবে।

২. দু'তিন মাস পরপর পুরো নগ্ন হয়ে দেহের প্রতিটি অংশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করুন। দেখুন নতুন কোন অাঁচিল দেখা দিল কিনা অথবা আগের কোন অাঁচিল থাকলে তার রং বা আকার আকৃতি পরিবর্তিত হল কি না। শরীরের কোথাও সন্দেহজনক দাগ অথবা ঘামাচির মতো কিছু দেখা যায় কিনা। মাথার ত্বক, হাত-পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকফোকর, বগল ভালো করে দেখুন। কোন কিছু অস্বাভাবিক মনে হলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অাঁচিল পরীক্ষায় এবিসিডি টেস্ট বলে পরিচিত পদ্ধতি অনুসরণ করুন। এসিমিট্রি অাঁচিলে দু'টি অংশ আছে কিনা এবং দুই অংশ দুই রকম কিনা ভালোভাবে পরীক্ষা করুন। বর্ডার ইরেগুলারটি অাঁচিলের ধার খাঁজকাটা কিনা, রঙ বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন করে কিনা যেমন- কালো, বাদামি, গোলাপি ইত্যাদি।

৩. পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে কিনা যাচাই করুন। আপনার যথেষ্ট ঘুম হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষার তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমত, সকালে সময়মতো ওঠার জন্য আপনার কি ঘড়িতে অ্যালার্ম দেয়ার দরকার হয়? দ্বিতীয়ত, বিকালের দিকে কি আপনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন? তৃতীয়ত, রাতের খাবারের পরপরই কি আপনাকে তন্দ্রাচ্ছন্নতা পেয়ে বসে? এর যে কোন একটি আপনার ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য হলে বুঝতে হবে আপনার ঘুম যথেষ্ঠ হচ্ছে না। দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানোর পরও যদি এসব সমস্যা হতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে এনার্জির ঘাটতি রয়েছে। তখন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

৪. বয়স পঞ্চাশ পেরুনোর পর নিয়মিত উচ্চতা মাপুন। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা বেশি জরুরি। দেহের আকার-আকৃতি ও হাঁড়ের মাপের দিকে খেয়াল রাখুন। উচ্চতা দ্রুত কমেছে মনে হলেই হাঁড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা করতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

৫. প্রস্রাবের রং খেয়াল করুন। অদ্ভুত শোনালেও স্বাস্থ্যের অবস্থা বোঝার জন্য এটা খুব জরুরি। আপনার প্রস্রাব স্বচ্ছ নাকি খড়ের রং-এর মত, নাকি আরও গাঢ় বর্ণের তা একটু লক্ষ্য রাখুন। এটা কি অতিরিক্ত দুর্গন্ধযুক্ত? তাহলে বুঝতে হবে আপনি যথেষ্ট তরল খাবার খাচ্ছেন না। প্রচুর পানি গ্রহণের পরও যদি প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হয় তাহলে ডাক্তারের কাছে যান।

৬. ব্যায়ামের পর হূদস্পন্দন পরীক্ষা করুন। জার্নাল অব আমেরিকার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয় ব্যায়ামের পর যেসব মহিলার হার্টরেট রিকভারি পরীক্ষায় দুর্বলতা ধরা পড়ে স্বাভাবিক এইচ আরদের তুলনার পরবর্তী দশ বছরের তাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশংকা দ্বিগুণ থাকে। টানা ২০ মিনিট হাঁটা অথবা জগিংয়ের পরপরই ১৫ সেকেন্ড হার্টবিট শুনন। এর সঙ্গে চারগুণ করলে আপনার পূণাঙ্গ হার্টবিটের হিসাব পেয়ে যাবেন। এরপর দুই মিনিট বসে বিশ্রাম নিন। একই প্রক্রিয়ায় আবার হার্টবিট মাপুন। প্রথমবারের হিসাব থেকে পরেরটি বাদ দিন। যদি ফলাফল ৫৫'র কম হয় তাহলে বুঝবেন আপনার হার্টবিট স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

৭. আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হন তাহলে নিয়মিত পায়ের পাতা পরীক্ষা করুন। পায়ের পাতায় যে কোন রকম ফোসকা, ফাঙ্গাসের আক্রমণ, কাটা-ছেঁড়া ইদ্যাদির বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে। এর চুড়ান্ত লক্ষণ ধরা পড়ে পায়ের পাতায়। কাজেই নিজেই নিয়মিত পায়ের পাতা ও রক্ত পরীক্ষা করলে আগে ভাগে লক্ষণ বুঝে চিকিৎসা নিতে পারবেন।

৮. কার্ডিওভাসকুলার চেকআপ: বয়স ৪০ বছর পেরুনোর পর ভবিষ্যৎ হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই পূণাঙ্গ কার্ডিওভাসকুলার চেকআপ করান।

আর আপনার পরিবারে যদি হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোকের ইতিহাস বেশি থাকে তাহলে চলিস্নশের আগেই অন্তত একবার এ পরীক্ষা করান। বিশেষ করে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা, ধূমপান, রক্তে শর্করার উপস্থিতি, রক্তচাপ, ইসিজির ফলাফল ইত্যাদি পরীক্ষা করা খুব জরুরী। শুধুমাত্র কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখে অবশ্য কিছুই বোঝা যাবে না। ঝুঁকির অন্য কারণগুলো কোলেস্টেরলের হার দ্রুত তারতম্য ঘটায়। কাজেই কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও নিশ্চিত হওয়ার খুব বেশি সুযোগ নেই। আপনার কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম ঝুঁকিমুক্ত কিনা জানতে অবশ্যই চিকিৎসকের সাহায্য নিন।

৯. ছয় মাস পরপর রক্তচাপ মাপুন। ঘরে অথবা ক্লিনিকে যেখানেই হোক নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন। উপরে ১৪০, ডায়াবেটিস থাকলে ১৩০ আর নিচে ৯০-এর, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ৮০ ওপরে হলে একদিন বিরতি দিয়ে আবার মাপুন। ফলাফল একই হলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান।

১০. চিরুনি বা ব্রাশ পরীক্ষা করুন। চুল যদি অস্বাভাবিক দ্রুত পড়ছে মনে হয় তাহলে ডাক্তারকে বলুন আপনার রক্তে ফেরিটিনের উপস্থিতি চেক করতে। রক্তে কি পরিমাণ আয়রণ আছে তা ধরা পড়বে। আয়রণের অভাবে অকালে চুল পড়ে যায়। থাইরয়েড সংক্রান্ত রোগেও এরকম হতে পারে।

No comments:

Post a Comment

ওয়ানপ্লাসের নতুন অক্সিজেন ওএস ১৫ আসছে AI নিয়ে

  অ্যান্ড্রয়েড ১৫  এর ওপর ভিত্তি করে আসছে  ওয়ানপ্লাসের  অক্সিজেন    ওএস  ১৫। অক্টোবরের ২৪ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত ৯:৩০ এ আনুষ্ঠানিকভাবে অপ...