‘রাত তখন সাড়ে দশটা, রাতের খাওয়া মাত্র শেষ হলো, খাওয়ার পর থেকে রহিমের বুকের মাঝে ব্যাথা অনুভব হয়। কারনটাও রহিমের জানা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাটা বেড়ে যাওয়াই এর কারন,দ্রুতই ঔষধ খেয়ে নেয়া, ঔষধ খেয়ে রুমে গেল রহিম, মিনিট দুয়েকের মাঝেই আবার ছেলেকে ডেকে পাঠানো, ব্যাথাটা যে কমছেনা, বরং এর সাথে ঘাড়ে ব্যাথা আর বার হাতের দিকেও ব্যাথা শুরু হয়েছে…… ছেলে কি করবে বা কোনো ডাক্তারকে ফোন দিবে কিনা ভাবার আগেই ব্যাথাটা হঠাৎ আরো বেড়ে যায়, পরিবারের সবাই মিলে তাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করে, রহিমের ছেলে ভাবে গ্যাস্ট্রিকের ইনজেকশান দিলেই দ্রুত ব্যাথা কমে আসবে, সি এন জি তে করে স্কয়ার হাসপাতালের ফিকে রওনা দেয়া, কিন্তু মাঝ পথ থেকেই রহিম আর কথা বলে না… হাসপাতালে পৌছুতেই আর বুঝার কিছু বাকি থাকে না, মাত্র ৫০ বছর বয়সেই হাজারো স্বপ্ন অপূর্ণ রেখে রহিম সবাইওকে ছেড়ে যায়, আর কারন ছিলো হার্ট অ্যাটাক!!!’
এই ঘটনার ব্যবহৃত নাম কাল্পনিক হলেও ঘটনা বাস্তব। শুধু মাত্র বোঝার ভুলের জন্য আর সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না নেয়ার জন্যই এই পরিনতি!
বুকে ব্যাথা আমাদের জীবনের সাধারন সমস্যা গুলোর একটা, যার সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত, কিন্তু এই বুকে ব্যাথা কখনো হয়ে উঠতে পারে সাংঘাতিক – আর তখন দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে তার পরিনতি যে কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, তার নমুনা ইতিমধ্যে আপনা পেয়েছেন।
সাধারনত কি কি কারনে বুকে ব্যাথা হতে পারে?
- প্লুরাইটিক বুকে ব্যাথা - সাধারনত নিউমোনিয়া বা অন্য শ্বসন তন্ত্র বিষয়ক সমস্যার সাথে সম্পর্কৃত
- ইশকেমিক কার্ডিয়াক ব্যথা - হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশান (এম আই) জনিত সমস্যার জন্য
- গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যার কারনে
- বুকের মাংসপেশীতে ব্যাথা হওয়ার কারনে
কিভাবে এই ব্যাথা গুলোকে আলাদা করা যায়?
যদিও সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠেনা কিন্তু তারপরও এই প্রত্যেকটা ব্যাথারই বিশেষ বিশেষ কিছু ফিচার আছে, যার মাধ্যমে এগুলোকে আলাদা করা সম্ভব এবং দ্রুত রোগীকে ম্যানেজমেন্ট করা সম্ভব।
প্লুরাইটিক বুকে ব্যাথা
- এই ব্যাথা সাধারনত শ্বসন তন্ত্রের যে কোনো সমস্যার কারনে হয়, নিউমোনিয়া বা শ্বাস নালীর কিংবা প্লুরার ইনফেকশানের কারনে এটা হতে পারে।
- সাধারনত বুকের বিশেষ কোনো অংশে এটা হয় আর সাধারনত বুকের মাঝে এই ব্যথা হয় না, বা কম দেখা যায়।
- ব্যাথার ধরন অনেকটা স্টাবিং(ঐ অংশে ছুরি চালানোর মতো) ধাচের হয়, যা সাধারনত অন্য কোথাও ছড়ায়না, যদিও ক্ষেত্র বিশেষে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়
ইশকেমিক কার্ডিয়াক ব্যাথা
- এই ব্যাথা সাধারনত হার্টের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারনে দেখা যায়।
- ব্যাথা বুকের মাঝে হয় যা পরবর্তিতে ঘাড় এবং বাম বাহুর ও হাতের দিকে ছড়িয়ে যায়, তবে এই ব্যাথা পেটের উপেরের অংশে ও দেখা যেতে পারে।
- ব্যাথার ধরন চেপে ধরার মতো, বা অনেক সময় এমনও মনে হয় বুকের উপর কোনো বড় বোঝা তুলে দেয়া হয়েছে
গ্যাস্ট্রিক জনিত ব্যাথা
- এই ব্যাথা সাধারনত পেটের উপরের অংশে দেখা যায়
- ভাজি বা মসলাদার খাবার খেলে ব্যাথা বেড়ে যায়
- ব্যাথা সাধারনত পেটের পিছনের দিকে যেতে পারে
- এই ধরনের রোগীর অনেকদিনের ব্যাথার হিস্ট্রি থাকে
বুকের মাংসপেশী জনিত ব্যাথা
- এই ব্যাথা বুকের যে কোনো স্থানে কিংবা সকল বুক জুড়েও হতে পারে
- বুকের কোথাও সরাসরি ব্যাথা লাগা কিংবা ভারী কিছু তুলতে যাওয়ার হিস্ট্রি থাকতে পারে
- জোরে শ্বাস নেয়ার কারনে বা হাটা চলা করে মাংসে টান পড়লেই ব্যাথাটা বেড়ে যেতে পারে
হার্টের জন্য ব্যাথা হলে কি করবেন??
যেহেতু এই ব্যাথার ফলাফল সবচেয়ে খারাপ, এটাই সবার আগে জানা প্রয়োজন।
যদি বুঝতে পারেন হার্টের জন্যই বুকে ব্যাথা তবে ‘গ্লিসারাইল ট্রাইনাইট্রেট স্প্রে/অ্যারোসল‘ কিনে জিহবার নিচে(জিহবা উল্টিয়ে) দুই চাপ দিয়ে দিবেন, আর এস্পিরিন ৭৫ মিগ্রা এর ৪ টি ট্যাবলেট একসাথে রোগীকে খায়িয়ে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিবেন।
No comments:
Post a Comment