আমরা যারা ইন্টারনেট ঘেটেঘুটে সিনেমা ডাউনলোড করি, তাদের অনেকের কাছেই ‘ডিরেক্টরস কাট’ শব্দটা পরিচিত। শব্দটা গ্যাঞ্জাম তৈরী করে যদি ‘কাট’ এর মানে জানা থাকে এবং সিনেমায় এর প্রয়োগ সম্পর্কেও। ডিরেক্টর শ্যুটিং এর সময় ‘কাট’ বলে চিৱকার করেন, আবার এডিটিং প্যানেলে বসেও কাটা কুটি চলে। যেহেতু ডিরেক্টরই একটি সিনেমার সব কিছু, তাই ডিরেক্টরস কাটের পর কিছু থাকতে পারে সে বিষয়ে সন্দেহ জাগে বৈকি।
সিনেমার শ্যুটিং শেষে এক্সপোজড ফিল্মগুলো এডিটিং প্যানেলে নিয়ে আসা হয় এবং স্ক্রিপ্ট অনুসারে এডিটর সেটা কাটাকুটি করে ফেলেন – এর নাম হলো রাফ কাট। রাফ কাটের সাথে আরো হাবিজাবি যোগ হয় – স্পেশাল ইফেক্ট, সাউন্ড, মিউজিক ইত্যাদি ইত্যাদি। ডিরেক্টর সাহেব এই জায়গায় এডিটরের সহায়তায় খবরদারি করেন, তার শিল্পীমনের বুরুশ চালান। শেষে যে সিনেমাটি তৈরী হয় এটিই ডিরেক্টরস কাট, এডিটরস কাটও বলা হয়। তবে যেহেতু সিনেমাকে একটি ডিরেক্টরস মিডিয়া হিসেবে বেশী মূল্যায়ন করা হয়, তাই এডিটর চাপা পড়ে যান ডিরেক্টরের নিচে।
আমাদের দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচালক, প্রযোজক ইত্যাদি শব্দগুলোর একটা গতানুগতিক ব্যাখ্যা আছে – কোথাও কোথাও সেটা অপব্যাখ্যায় রূপ নিয়েছে। যেমন – প্রোডিউসারের বাংলা হয়েছে প্রযোজক, অর্থ্যাৱ যিনি টাকা লগ্নি করেন। হলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কিন্তু প্রোডিউসারের কাজ টাকা লগ্নি করা নয় – অনেক ক্ষেত্রে প্রযোজক পরিচালকের চেয়েও বেশী ক্ষমতাবান। একটা সহজ উদাহরণ দেই – একজন পরিচালক সারা দিন সিনেমার শ্যূটিং শেষ করে সন্ধ্যার পর স্ক্রিনের সামনে বসলেন প্রযোজকসহ – উদ্দেশ্য কি করলেন সেটা দেখা। প্রযোজক যদি এক্ষেত্রে সন্তুষ্ট না হন তবে হয়তো পরিচালককে আবারও সেটা শ্যুট করতে হবে – অবশ্যই এখানে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়। সাধারণভাবে আমরা যে সিনেমা দেখি, সেটাই থিয়েটারিকাল ভার্সন, তাই আলাদা করে বলতে হয় না।
এই প্রোডিউসার শব্দটিও আমাদের দেশের সিনেমা দর্শকদের মাঝে মধ্যে দোটানায় ফেলে দেয় – সিনেমার ট্রেলারে বলা হলো, অমুকের সিনেমা, কিন্তু সিনেমার শুরুতে দেখা গেল – পরিচালক অন্য কোন ব্যক্তি। মনে হয়, ভাওতাবাজী করা হয়েছে সিনেমায় – কিন্তু তা নয়, একজন গুনী পরিচালককে আরেকজন গুনী পরিচালক প্রযোজনায় সাহায্য করতেই পারেন – যেমন আগামীতে মুক্তি পেতে যাচ্ছে ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অব টিনটিন: দ্য সিক্রেট অব দ্য ইউনিকর্ণ’ সিনেমাটি যেখানে পরিচালক স্টিভেন স্পিলাবার্গ এবং প্রযোজেক/প্রোডিউসার হলেন পিটার জ্যাকসন।
ডিরেক্টর তার মনের মাধুরী মিলিয়ে যে সিনেমাটা নির্মান করলেন, সেখানে হয়তো শেষ পর্যন্ত প্রোডিউসার কিংবা প্রোডাকশন কোম্পানীর সিদ্ধান্তই প্রধান হয়ে যায়। ফলে ডিরেক্টরস কাটের পরে এসে দাড়ায় ‘থিয়েটারিকাল কাট’ – এখানে এসে ডিরেক্টর কাট ও কাটা পড়তে পারে। প্রায় সব সিনেমাই ডিরেক্টর কাটের তুলনায় একটু ছেটে ছুটে থিয়েটারিকাল কাট তৈরী করা হয় যা পরবর্তীতে সিনেমা হলগুলোতে প্রদর্শন করা হয়। কখনো কখনো এই কাটাকুটির পরিমান বেশ বড়ই হয় – যেমন, রিডলি স্কটের ‘কিংডম অব হ্যাভেন’ সিনেমার ডিরেক্টরস কাট তার থিয়েটারিকাল কাটের তুলনায় প্রায় ৪০ মিনিট বেশী ছিল এবং মুসলমান সেনাপতি সালাউদ্দীনকে আরও বীর আরও শ্রদ্ধেয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু এত দীর্ঘ সিনেমা দর্শকদের মধ্যে বিরক্তি এবং অনাগ্রহ সৃষ্টি করতে পারে এই আশংকায় এই ‘ছাটায়ন।
ডিরেক্টরও এমন প্রস্ততি নিয়েই সিনেমার পরিচালনায় আসেন। যেমনটি হয়েছে দ্য বাটারফ্লাই ইফেক্ট সিনেমার ক্ষেত্রে। পরিচালক তার সিনেমার শেষে প্রায় সাতটি সমাপ্তি রেখেছিলেন – সবশেষে থেকে গিয়েছে একটি মাত্র। কোন কোন ক্ষেত্রে ডিরেক্টরস কাটের তুলনায় থিয়েটারিকাল কাট বেশী সফল হয়, কখনো তা হয় না। অনেক সময় পরিচালক থিয়েটারিকাল কাটে সন্তুষ্ট থাকেন, কখনো কখনো নয়।
থিয়েটারিকাল কাট থিয়েটারে দেখানো হলেও ডিরেক্টরস কাট কিন্তু ঠিক দর্শকের সামনে চলে আসে, বিশেষত: ফিল্ম ফেস্টিভাল আর ডিভিডির কল্যানে। রিডলি স্কটের সিনেমাটির থিয়েটারিকাল ভার্সনের তুলনায় ডিরেক্টরস কাট ভার্সনটিই সমালোচকদের কাছে বেশী প্রিয়।
Balo.......
ReplyDelete