Wednesday, September 14, 2011

হিন্দী মুভি বাংলা রিভিউ- “Zindagi Na Milegi Dobara”

জীবনে আছি আর কত দিন?? একটু মজা কইরা লই। ভেবেছিলাম এই ধরণেরই কোন মুভি হয়তো হবে Zindagi Na Milegi Dobara। কিন্তু না । একদম অন্য ধরণের একটি মুভির স্বাদ পেয়ে নিজেকে কেমন জানি বোকা বোকা লাগছে। অনেকদিন পর একটি পুনরায় যেন জেগেছে উঠেছে বলিউড। কপি , হলিউডি ইষ্টাইল , রজনীকান্ত ইষ্টাইল কিংবা ছ্যাবলামি মার্কা মুভিগুলির ভিড়ে সকলে যেন ভুলেই গেছিল যে হিন্দী ভাষাতেও ভালো মুভি হয়। হিন্দী মুভির যেন পুনর্জাগরণের নাম Zindagi Na Milegi Dobara । যেখানে দেখানো হয়েছে জীবনের এক দার্শনিক রূপকে একটু আধুনিক ভাবে।
কাহিনী জানা যাক। Kabir (Abhay Deol) এর সাথে কয়েকদিন পরই Natasha ( Kalki Koechin) এর বিয়ে। কিন্তু বিয়ের আগে শেষবারের মত একটু মজা করে নেয়া যাক। Kabir তার অপর দুই বন্ধু Imraan ( Farhan Akhtar) এবং Arjun ( Hrithik Roshan) কে নিয়ে বেরিয়ে পরে Spain এর উদ্দেশ্যে, যা হল তাদের ব্যাচেলর ট্রিপ। বুদ্ধিটা Imraan এর কিন্তু ট্রিপে রয়েছে কিছু রোমাঞ্চকর শর্ত। তিনজনের প্রত্যেকেই তাদের জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর কিংবা রোমাঞ্চকর কাজটি যদি করতে উদ্যত হয় তাহলে বাকি দুজনকেই সাথ দিতে হবে সেটা ইচ্ছা থাকুক কিংবা না থাকুক। তার প্রথম প্ল্যানের মধ্য থাকে ডুব-সাঁতার। যাতে প্রশিক্ষক হিসেবে Laila ( Katrina Kaif) তাদের বন্ধু হয়ে পরে। কিন্তু এইসব প্ল্যান ছিল Imraan এর যখন ছিল তারা কলেজ পড়ুয়া কিন্তু অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। আগের মতো তারা আর জানের দোস্ত রয়েছে শুধুমাত্র বাইরের দিক দিয়ে।এখন প্রত্যেকের মধ্যেই রয়েছে কিছু গোপন রহস্য যেগুলি ধীরে ধীরে মুভি চলাকালীন সময়ে খোলাসা হতে থাকে। Arjun এর কাছে বর্তমানে বন্ধুদের উপর বিশ্বাস করাই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ তার বন্ধু Imraan ই তাকে একটি বড় ধোঁকা দিয়েছে। কিন্তু তিনজনের প্রত্যেকেই নিজেদের সমস্যাগুলি নিয়ে এতটাই মশগুল হয়ে পরে যে তারা ভুলেই যায় যে জীবন যদি এভাবেই চলে তাহলে তাদেরকে জীবিত বলা ঠিক হবে কি?? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে তাদের তিনজনের অদ্ভুত এক সফরের কাহিনী Zindagi Na Milegi Dobara যার জবাব সকল দর্শকরাও যেন তাদের নিজেদের জীবনের পিছনদিকে তাকিয়ে খুঁজতে শুরু করে।
পুরো মুভিটির বিষয়বস্তু খুব ভাব-গাম্ভীর্যপূর্ণ হলেও মুভিটিতে সকল দর্শকরা যেন ভিতরেই ঢুকে যাবে। মনে হবে যেন সকলেই যেন এক সাথে Spain অদ্ভুত সৌন্দর্য অবলোকন করছি। কিংবা চলার পথে নিজেকে জিজ্ঞেস করছি: “আমি আমার জীবনকে বাঁচিয়ে রেখেছি?”। মুভিটির পরিচালনা অসাধারণ না বলে বলা উচিত এক্কেরে ফাটাই ফালাইসে। Joya Akhtar এর দুর্ধর্ষ পরিচালনা দেখে বলিউডের বিখ্যাত পরিচালকগুলিও আমার মনে হয় বলতে বাধ্য হবে “ এই মুভি , আমি বানাইতে ফারতাম না।“। এরকম ভ্রমণ কেন্দ্রিক মুভি বলিউডে বোধহয় এই প্রথম। মুভিটিতে কিছু কিছু দৃশ্য করেছে কিভাবে ভাবতেই অবাক লাগে। তার উপর এত কঠিন একটি কাহিনী যার মধ্য রয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। প্রত্যেককেই কীভাবে সমান গুরুত্ব দিয়ে মুভিটি যে এগিয়ে যায়, সত্যিই অবাক লাগে।
অভিনয়ের দিক দিয়ে বলবো সবাই দারুণ করেছে। প্রথমেই Hrithik এর কথা বলি। Hrithik এর অভিনয় ক্যারিয়ারের অন্যতম কঠিন চরিত্র এটি। স্বাভাবিকভাবে Hrithik এর পক্ষে সবই সম্ভব। কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা বিষয় যে মুভিটিতে কিন্তু Hrithik এর চরিত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই জন্য অবশ্যই Hrithik কে ধন্যবাদ জানাতে হয়। অন্য নায়কদের মত: “ধুর মিয়া, আমার দাম নাই , এই মুভি করুম না।“ এই রকম কথা Hrithik বলেনি। Arjun চরিত্রটি Hrithik বাদে অন্য কারো পক্ষে করা সম্ভব ছিল না।
Abhay Deol , Hrithik এর খ্যাতির কাছে চুনোপুঁটি ধরণের হলেও তিনি যে একজন বড় মাপের অভিনেতা এটা তিনি ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। Abhay সবসময় অন্য ধরণের মুভি করে তার জায়গা ধীরে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাচ্ছে।
সবশেষে বলতে হয় এই মুভির প্রাণ Farhan Akhtar। অসাধারণ অভিনয়। Imraan এর চরিত্রটি ভয়ংকর রকমের জটিল। সবসময় ফুর্তি করে বেড়াচ্ছে কিন্তু এদিকে মনের ভিতর এক ভয়ংকর কষ্ট। এই মুভির পর Farhan কে বড় মাপের অভিনেতা বলতে বাধ্য হবো।
এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে Kalki , Katrina , Naseeruddin Shah বেশ ভালো করছে। Katrina কে আর আগের মত সুন্দর চেহারার জোড়ে মুভি পায় এটা বলা যাবে না। এছাড়া Hrithik-Kat এর এই নতুন জুটি বেশ ভালো লেগেছে।
মুভিটির সংগীত একেবারে অন্যরকম।Shankar-Ehsaan-Loy আবার বাজিমাত করলো। তার সাথে Javed Akhtar এর গানের কথা। Dil Dhadakne Do, Khawbon ke Parindey বেশ সুরেলা। তবে সবচেয়ে নজর কেড়েছে Senorita । কারণ Hrithik, Abhay , Farhan তিনজনই এই গানে কণ্ঠ দিয়েছে। Senorita গানের শুটিং এর সময় Alajar শহরের লোকেরা হুশিয়ার করে দেয় “ বেশী চিল্লাচিল্লি করোন যাইবোনা “ কিন্তু পরে খোদ Alajar এর মেয়রের শ্যুটিংয়ে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া Ik Junoon গানটির দৃশ্যায়নের জন্য ১৬ টন টমেটো ব্যবহৃত হয়। এই শুটিং এর পর সকল অভিনেতারা কয়েক সপ্তাহ ধরে টমেটোর নাম শুনলেই বমি করতেন।
মুভিটির খারাপ দিক হলো মুভিটি একটু লম্বা। শেষের দিকের কিছু দৃশ্য একটু বিরক্তিকর। তবে শেষের ষাঁড়-দৌড়ের দৃশ্যটি অসাধারণ। সবারই মনে হবে যে আমিও এই তিন যুবকের সাথে দৌড়ে চলছি, এ যেন জীবনের দৌড়।
মুভিটি The Hangover এর নকল বলে কথা উঠেছে। কিন্তু The Hangover এর সাথে কোন দিক দিয়েই কোন মিল নেই । আমার মতে অভিযোগ করার আগে অত্যন্ত মুভিটা দেখবি-তো রে বাপ!!
এরকম মুভি করার জন্য মুভিটির সকল কলাকুশলীদের অভিনন্দন জানাই। এক কথায় অসাধারণ!!

রেটিং – ৪.৫ / ৫

No comments:

Post a Comment

ওয়ানপ্লাসের নতুন অক্সিজেন ওএস ১৫ আসছে AI নিয়ে

  অ্যান্ড্রয়েড ১৫  এর ওপর ভিত্তি করে আসছে  ওয়ানপ্লাসের  অক্সিজেন    ওএস  ১৫। অক্টোবরের ২৪ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত ৯:৩০ এ আনুষ্ঠানিকভাবে অপ...