Thursday, October 27, 2011

আপনি কি জানেন ফেসবুকে আপনি কতটুকু নিরাপদ ? না জানলে জেনে নিন !

ফেসবুক বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় ও সর্বাধিক ব্যবহৃত একটি সোশাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট।হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ১৯ বছরবয়সী মার্ক জুকারবার্গ ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুকের অভিষেক ঘটান। ফেব্রুয়ারিতেই হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেক ফেসবুকে রেজিস্ট্রেশন করেন। বর্তমানে ফেসবুকের রয়েছে ১৪০ মিলিয়নেরও (১৪কোটি) বেশি ব্যবহারকারী।পরিসংখ্যানে দেখা যায়,বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের গতবছরের মাসিক ক্রমবৃদ্ধি ১১৮%।বিখ্যাত এ সেবাটি ব্যবহারসম্পূর্ণ বিনামূল্যে হলেও ফেসবুক ব্যবহারকরা কতোটা নিরাপদ, একবার ভেবে দেখেছেন কি ? মনে হতে পারে, এতো বড় একটি সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে কোনো গলদতো থাকতেই পারে না। কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনার একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে ব্যবসা করছে ফেসবুক?তারচেয়েও মজার ব্যাপার হলো,আপনিই আপনার নিজের অজান্তে তাদের অনুমতি দিচ্ছেন আপনার তথ্যনিয়ে ব্যবসা করার।রেজিস্ট্রেশনের সময় টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস এবং প্রাইভেসি পলিসিরসঙ্গে একমত পোষণ করা মানেই আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর ফেসবুকের হস্তক্ষেপের অধিকার সমর্থন করা। আসুন বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয়ও বহুল ব্যবহৃত এ সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটস ম্পর্কে এমন কিছু চমকপ্রদতথ্য জেনে নিই যা জানলে ফেসবুক ব্যবহার করা কেন শুরু করলেন, এ আফসোস করতে পারেন অনেকেই।

ফেসবুক ব্যবহার করার মধ্যদিয়ে আপনার ব্রাউজারে বেশ কিছু কুকি জমা হচ্ছে। এসব কুকি ফেসবুকই আপনার ব্রাউজারে জমা করছে। এসব কুকি আপনার ব্রাউজার ব্যবহার করে অন্যান্য ওয়েবসাইট ব্যবহার করার সময় আপনার ফেসবুক একাউন্টকে আইডেন্টিফাই করে দেয়।আপনি যদি ব্রাউজারে কুকি ডিজঅ্যাবল করে রাখেন,তাহলে আপনি ফেসবুকে ঢুকতেই পারবেন না। ১০ বিলিয়নেরও বেশি সংখ্যকছবি রয়েছে ফেসবুকে, যা আপনারমতোই সাধারণব্যবহারকারী কর্তৃক আপলোডকৃত। অর্থাৎ ফেসবুক শুধু সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটই নয়,বরং বিশ্বের এক নাম্বার ফটো শেয়ারিং ওয়েবসাইটই বটে! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়হচ্ছে, ফেসবুকের প্রাইভেসি পলিসি মতে, ব্যবহারকারী ছবি আপলোডের মাধ্যমে ছবির সব অধিকার ফেসবুককে দিয়ে দিচ্ছেন।অর্থাৎ ফেসবুক আপনার ছবি নিয়ে যা ইচ্ছা তা করতে পারবে।আপনি কি জানেন, ফেসবুক আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এবং ফেসবুকে আপনার কর্মকা-সব সংরক্ষণ করে?এমনকি আপনি যদি আপনার একাউন্ট ডিলিটও করে ফেলেন,তবুও ফেসবুকের কাছে আপনার সব তথ্য সংরক্ষিতথাকবে। ফেসবুকের বর্তমানে নিযুক্ত ব্যারিস্টার টেড আমেরিকার সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) সাবেক অ্যাটর্নি ছিলেন।বলা বাহুল্য, তিনি সিআইএর ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’অভিযানে প্রাইভেসি ইস্যুনিয়ে ঘাঁটাঘাঁটিতে বিখ্যাত ছিলেন। অর্থাৎফেসবুকে ব্যবহারকারীদের
ব্যক্তিগত তথ্যাদি নিয়ে ঘাঁটা ঘাঁটিরকাজে নিয়োজিত আছেন একজন বিখ্যাত সিআইএ অ্যাটর্নি। ৪০টি বড় ধরনের ওয়েবসাইটে আপনার কর্মকাের ব্যাপারে অবগত আছে ফেসবুক,যাদের সঙ্গে ফেসবুকের পার্টনারশিপ আছে। সেসব৪০টি সাইটের কোনোটা না কোনোটা হয়তো আপনি ব্যবহার করেন। ব্যবহারের সময় সেসব সাইট আপনার ফেসবুক একাউন্টকে আইডেন্টিফাই করে ফেসবুক কর্তৃক আপনার ব্রাউজারে জমা করা কুকির মাধ্যমে। ফেসবুকের মালিক মার্কজুকারবার্গ ফেসবুককে বিক্রি করার একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রস্তাবে ফেসবুকের দাম ৯৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। ফেসবুক যদি বিক্রি করা হয়,তাহলে ক্রেতার কাছে ফেসবুকের সব ব্যবহারকারীর সব ব্যক্তিগত তথ্যও হস্তান্তর হয়ে যাবে। এমনকি যাদের একাউন্ট ডিলিট করা হয়েছে বা যারা ইচ্ছা করেই ফেসবুক ত্যাগ করেছেন, তাদের তথ্যও! এর মানে হচ্ছে এই যে,আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যা একবার ফেসবুকে দেয়া হয়েছে,এগুলোকে শেষ করার কোনো উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে আপনি একবার ফেসবুকে প্রবেশ করেছেন তো আপনি ফেসবুকে অমর হয়ে থাকবেন! ফেসবুক ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তাদের কোম্পানির ১.৬ শতাংশস্টেক মাইক্রোসফটের কাছে ২৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করতে সম্মত হয়। অর্থাৎ এক্সক্লুসিভ থার্ড পার্টি কোম্পানি হয়েও মাইক্রোসফট ফেসবুকের সব প্রোফাইলের যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্যাদি পেয়ে যাবে।ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ ব্যবহারকারীই বিশ্বের সবচেয়ে অল্পবয়সী বিলিওনেয়ার বা শতকোটিপতি (১.৫ বিলিয়নডলারের অধিকারী)! সাইবার স্পেসে ব্যক্তিগত তথ্যাদি অত্যন্ত মূল্যবান এবং এসব গোপন রাখা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু ফেসবুকে দেয়া প্রত্যেকটি গোপনীয়ও ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুক আজীবন সংরক্ষণ করে এবং প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির অধিকারও সংরক্ষণ করে। আপনি কি কখনো লক্ষ্য করেছেন,ফেসবুক ব্যবহারের সময়পাশে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনগুলো আপনার পছন্দের সঙ্গে মিলে যায়? ফেসবুকের একটি বিশেষ প্রক্রিয়া সাইবারস্পেসে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত কার্যক্রম প্রত্যক্ষ ও বিশ্লেষণ করে যাতে ব্যক্তিগত তথ্যগুলোকে আরো মূল্যবান করে তোলা যায়। অর্থাৎ,ফেসবুকের একটি গোপন চোখ সবসময়ই আপনার একান্ত ব্যক্তিগত কার্যক্রমের ওপর নজর রেখে চলেছে!প্রণীত আইনঅনুসারে, আপনি যে দেশে অবস্থান করছেন,সে দেশে ফেসবুকের কোনো কার্যালয় না থাকলে ফেসবুকের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারেননা। কারণ, আপনার কোনো অভিযোগ গ্রহণ করা হবে না।তুমুল বিতর্কের পর ফেসবুকের প্রধান মার্ক স্বীকার করেন,ফেসবুক থার্ডপার্টি ওয়েবসাইট থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে।এমনকি মুছে দেয়া প্রোফাইলের ব্যবহারকারীর তথ্যও ফেসবুক সংগ্রহ ও সংরক্ষণ অব্যাহত রাখে। ফেসবুক তৈরিতে মার্কহার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অন্য ছাত্রদের আইডিয়া চুরি করেছেন, এমন একটি দাবি এবং এ নিয়ে আইনি জটিলতাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য ফেসবুক ২০০৮ সালের জুনে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে রাজি হয়, এ টাকার পরিমাণ কখনো প্রকাশ করা হয়নি।আপনি যদি আপনার নাম, ই-মেইল ঠিকানা,ঠিকানা ইত্যাদি পরিবর্তনও করে ফেলেন, তবুও ফেসবুকের‘ফ্রেন্ড ফাইন্ডার’অপশনে আপনার সবপুরনো তথ্যাদির রেকর্ড সংরক্ষিত থাকে। আপনার ফেসবুক প্রোফাইলে আপনার মোবাইল নাম্বার ‘টাইপ করা’ মোবাইল স্প্যামিং বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।গত বছর ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দ্বারা প্রায় ১হাজার ফেসবুক অ্যাপ্লিকেশন ব্যানকরা হয়েছে। ফেসবুকের অ্যাপ্লিকেশনগুলো পুরোপুরিই সাধারণ ব্যবহারকারীদের দ্বারা তৈরি এবং এগুলো ব্যবহার করা মোটেই নিরাপদ নয়।সুতরাং, ফেসবুক অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকুন এবং ব্যক্তিগত তথ্যাদি দেয়া থেকে বিরত থাকুন। সম্প্রতি ফেসবুকের নতুন সংস্করণ উন্মুক্ত হয়েছে।কিন্তু বেশকিছু কারণে ৭০লাখেরও বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী নতুন ফেসবুকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা আপত্তি জানানোর উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি গ্রুপগুলোতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন। এফবিআইয়ের পরামর্শ মতে,গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত লোকজনের (যেমন পুলিশ অফিসার)উচিত ফেসবুক থেকে ব্যক্তিগত তথ্যাদি মুছে ফেলা। কারণ,ফেসবুক থেকে ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার খুব সহজেই করা সম্ভব এবং এমনটা হয়ে থাকে। ফেসবুক দাবি করে, তাদের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রয়েছে। কিন্তু এমআইটির (ম্যাসাচুসেটসইন্সটিটিউট অফ টেকনোলোজি) দুজন ছাত্র স্বয়ংক্রিয় বা অটোমেটেড স্ক্রিপ্টব্যবহার করে ৭০ হাজারেরও বেশি ফেসবুক প্রোফাইল ডাউনলোড করতে সক্ষম হয়েছিল।এতে বোঝা যায়, ফেসবুকের দাবি সঠিক নয় এবং ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুকে প্রকাশকরা বা দেয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ফেসবুকের একটি বড় সংখ্যক প্রোফাইলই পেশাদার জালিয়াতদের দ্বারা তৈরি।এসব প্রোফাইলের মাধ্যমে তারা সাধারণ মানুষকে বন্ধুত্বের আবেদন পাঠায় এবং আবেদন গৃহীত হওয়ার পর প্রোফাইলে প্রবেশ করে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়। তাই অপরিচিত কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করার আগে দশবার চিন্তা করুন! ৪ হাজারেরও বেশি বন্ধু আছে এমন ফেসবুক একাউন্টগুলো প্রায়ই কোনো প্রকার কারণ দর্শানো বা কারণ ব্যাখ্যা করা ছাড়াই বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে ফেসবুকের টার্ম অফএগ্রিমেন্টে কিছু উল্লেখ করা নেই। ফেসবুক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আপনি বৈশ্বিক সাইবার অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন! কেননা আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাদি ফেসবুকের অন্যান্য পার্টনারদের কাছে ট্রান্সফার করা হচ্ছে,যাদের ব্যাপারে আপনার হয়তো কোনো ধারণাই নেই। সম্প্রতি ফেসবুক বেশকিছু ভয়াবহ ভাইরাস শনাক্ত করেছে,যা ব্যবহারকারীকে বিনামূল্যে ভিডিওর কথা বলে আক্রমণ করে। অতএব,ফেসবুকে প্রাপ্ত কোনো লিংকে ক্লিক করার সময় সতর্ক থাকুন। ক্লিক না করাই নিরাপদ থাকার শ্রেষ্ঠ উপায়। ফেসবুক থেকে প্রায়ই চুক্তিপত্রের নীতিমালা লঙ্ঘনের নামে ছবি মুছে দেয়া হয়ে থাকে।তবে এসব ছবি চুক্তিপত্রের ঠিক কোন ধরনের লঙ্ঘনের কারণে মুছে দেয়া হয়েছে,তা কখনোই ব্যবহারকারীকে জানানো হয়না। অর্থাৎ ফেসবুকে আপনার ছবি অকারণেই ডিলিট বা অপব্যবহারের শিকার হতে পারে। ফেসবুক বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও এটি ব্যবহার যে সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়, তা কিন্তু ফেসবুক নিজেই উল্লেখ করে রেখেছে তাদের টার্মস অফ এগ্রিমেন্টএবং প্রাইভেসি পলিসিতে।কিন্তুসাধারণত কোথাও রেজিস্ট্রেশনের সময় ব্যবহারকারীরা এগ্রিমেন্টে রসঙ্গে একমত পোষণ করে রেজিস্ট্রেশন করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়,ব্যবহারকারী জানেনই না সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নীতিমালা কী বা গোপনীয়তার নীতি কী। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তারই পরিণাম ভোগ করতে হবে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য পাচার হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে।সুতরাং, ফেসবুকে কোনোক্রমেই ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্য প্রকাশ করা উচিত নয়।অন্যথায় আপনার তথ্য নিয়ে ব্যবসা চালাতে থাকবে ‘জনপ্রিয়’ ও ‘বিশ্ববিখ্যাত’ এই নেটওয়ার্কটি।

No comments:

Post a Comment

ওয়ানপ্লাসের নতুন অক্সিজেন ওএস ১৫ আসছে AI নিয়ে

  অ্যান্ড্রয়েড ১৫  এর ওপর ভিত্তি করে আসছে  ওয়ানপ্লাসের  অক্সিজেন    ওএস  ১৫। অক্টোবরের ২৪ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত ৯:৩০ এ আনুষ্ঠানিকভাবে অপ...