পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা কি ? এই প্রশ্নটি
একজন সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞেস করা হলে ,তার উত্তরটি হবে ইলেক্ট্রন,প্রোটন ও
নিউট্রন হচ্ছে পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা। আর যারা একটু-আধতু পদার্থ
বিজ্ঞানের খবর রাখে তারা হয়তো বলেই দিবে পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা হচ্ছে
কোয়ার্ক ,লেপ্টোন ইত্যাদি । তারমানে দাড়াচ্ছে আমি যা নিয়ে লিখতে যাচ্ছি তা
কম-বেশি সবার জানা ,তারপরেও লিখছি যদি কারো অজানা থাকে। পদার্থের এই
ক্ষুদ্রতম কণা সম্পর্কে মানুষ আগে জানতো না। ১৮০৩ সালের আগে মানুষ জানতো
আমাদের বিশ্বব্রাহ্মন্ড ৪ টি মৌলিক বস্তু দিয়ে গঠিত।
- মাটি
- পানি
- বাতাস
- আগুন
আর মৌলিক বস্তুর ধারনাটি বিখ্যাত দার্শনিক
অ্যারিস্টটল প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন । যদিও তার আগে গ্রীক দার্শনিক
ডেমোক্রিটাস এবং ভারতের কণাদ বলেছিলেন পদার্থ সমূহ অতি ক্ষুদ্রতম কণা
দ্বারা গঠিত যার নাম দেন তাঁরা অ্যাটম । কিন্তু অ্যারিস্টটলের জন্য এই
মতবাদ টি তেমন গ্রহণ যোগ্যতা পায়নি । এরপরে ১৮০৩ সালে বৃটিশ বিজ্ঞানী জন
ডাল্টন আবার ডেমোক্রিটাসের মতবাদকে সমর্থন করে পরমানুবাদের সূচনা করেন ।
এরপর ১৮৯৭ সালে জে জে থমসনের ইলেকট্রন আবিস্কার ,১৯১৯ সালে রাদারফোর্ডের
প্রোটন এবং ১৯৩২ সালে চ্যাডউইকের নিউট্রন আবিস্কারের মাধ্যমে আজকের পরমাণুর
গঠন পাই । আর এই ইলেকট্রন,প্রোটন এবং নিউট্রন কেই ক্ষুদ্রতম কণা মনে করা
হতো ,কিন্তু বর্তমানে পদার্থবিদরা এই ৩ টি কণার চেয়েও ক্ষুদ্রতম কণার কথা
বলেন আর তা হচ্ছে কোয়ার্ক , লেপ্টোন এবং বোসন কণার কথা । আমি এতক্ষন যে কণা
গুলোর কথা বললাম পদার্থের এই খুদ্রতম কণা গুলোর একটা গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম
হচ্ছে স্পিন , স্পিন অর্থ হচ্ছে কণা গুলোর লাটিমের ন্যায় ঘুরা ।
কিছু কণা আছে যাদের কে ,যে কোন অ্যাঙ্গেল হতে
একই রকম দেখা যায় অর্থাৎ তাদের স্পিন হচ্ছে ০ (শূন্য) ব্যাপারটা আরো সহজ
ভাবে বলা যায় যে , একটা গোলাকার বস্তুর যে কোন দিক হতেই আমরা দেখি বস্তু
টাকে একই রকম দেখা যাবে । কিছু কণা আছে ৩৬০০ ঘুরলে অনুরূপ দেখা যায় তাদের স্পিন হচ্ছে ১ যেমন দুইজন মানুষ মুখোমুখি দাড়ালো , এখন একজন যদি অপর জন কে কেন্দ্র করে ঘুরে তাহলে ৩৬০০ ঘুরার পর আবার তাকে অনুরূপ দেখতে পাবে । কিছু কণা আছে ১৮০০
ঘুরলে অনুরূপ দেখা যায় তাদের স্পিন হচ্ছে ২ । এতক্ষণ যা বলা হল তা বেশ
সোজা-শাপটা কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল এমনও কণা আছে যাদেরকে পূর্ণ একবার
ঘুরালেও অনুরূপ দেখা যায়না , দুইবার পূর্ণ ঘূর্ণন অর্থাৎ ৭২০০ ঘুরার পর অনুরূপ দেখা যায় । যেমন ইলেকট্রন হচ্ছে ১/২ স্পিন কণা । এই সব কিছুই গাণিতিকভাবে দেখানো হয়েছে ।
আসলে আমাদের চারপার্শে যা দেখি সব কিছুই মূলত দুই ধরনের কণা দিয়ে গঠিত –
১.ফার্মিয়ান কণা , এই কণাগুলো ফার্মি-ডিরাক সংখ্যায়ন মেনে চলে ।
২.বোসন কণা , এই কণাগুলো বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন মেনে চলে ।
এই দুই ধরনের কণার সমন্বয়ে আমাদের এই বিশ্ব জগত গঠিত ।
222222222222222222222222222222222222222222222222222222222222222222222222222222222
উপরে কোয়ার্কের কথা বলা হয়েছে যারা না জানে তারা আবার বলবে এই কোয়ার্ক মশাই আবার কে? যে কিনা আবার প্রোটন আর নিউট্রন কে গঠন করে , আসলে কোয়ার্ক হচ্ছে ফার্মিয়ান কণার একটি গ্রুপের নাম । গ্রুপ না বলে বলা উচিত ফার্মিয়ান কণাদের দুইটি পরিবারের একটি পরিবার । ফার্মিয়ান কণাদের পরিবার দুইটি হচ্ছে-
ক) কোয়ার্ক এবং
খ) লেপ্টোন
চিত্র-১: ফার্মিয়ান কণাদের পরিবার ।
কোয়ার্ক হলো এক প্রকার মৌলিক কণিকা। এরা হ্যাড্রনদের*১ গঠন উপাদান। মুরে জেল-ম্যান এদের নাম দেন কোয়ার্ক। নামটি জেমস জয়েস এর ফিনেগান্স ওয়েক এর একটি হেঁয়ালিপূর্ণ উক্তি: “থ্রি কোয়ার্ক্স ফর মিউস্টার মার্ক!” থেকে নেয়া হয়েছে।
কোয়ার্ক এর ছয়টি ফ্লেভার আছে: আপ, ডাউন, চার্ম, স্ট্রেঞ্জ, টপ ও বটম। এই প্রতিটি ফ্লেভারের আছে তিনটি করে বর্ণ: লাল, সবুজ ও নীল। কোয়ার্কের তড়িতাধান ভগ্নাংশ (প্রোটন বা ইলেকট্রনের তুলনায়) পরিমাণ হয়ে থাকে।
আমরা যে প্রোটন এবং নিউট্রন এর কথা জানি তাদের মধ্যে প্রোটন মূলত ২টি up quark এবং ১টি down quark দিয়ে গঠিত এবং নিউট্রন ১টি up quark এবং ২টি down quark দিয়ে গঠিত । এ ছাড়া অন্যান্য কোয়ার্ক দিয়ে অনেক কণা গঠিত হয় কিন্তু এদের ভর বেশি বলে এরা প্রোটন বা নিউট্রন এ রুপান্তর হয় ।
চিত্র-২ : কোয়ার্ক দ্বারা প্রোটন ও নিউট্রনের গঠন ।
এইবার আসি লেপ্টোন এর কথায় , আমরা যে ইলেক্ট্রন এর কথা জানি তা লেপ্টোন পরিবারের সদস্য । এই লেপ্টোন কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয় –
- চার্জ লেপ্টোন
- নিউট্রাল লেপ্টোন (যা নিউট্রিনো নামে বেশি পরিচিত )
চিত্র-৩ : পজিট্রোনিয়াম পদ্ধতি
কোয়ার্কের মতো লেপ্টোনের ও ছয়টি ফ্লেভার আছে যা ৩টি প্রজন্ম (Generation) গঠন করে-
- ১ম প্রজন্ম (1st Generation) হচ্ছে ‘ইলেকট্রনিক লেপ্টোন’ যার মধ্যে আছে electron বা ইলেকট্রন (e-) এবং electron neutrinos বা ইলেকট্রন নিউট্রিনোস্ (Ve) অন্তর্ভুক্ত ।
- ২য় প্রজন্ম (2nd Generation) হচ্ছে ‘মিউনিক লেপ্টোন’ যার মধ্যে আছে muons বা মিউনস্ (μ )এবং muon neutrinos বা মিউনস্ নিউট্রিনোস্ (Vμ) অন্তর্ভুক্ত । এবং
- ৩য় প্রজন্ম (3rd Generation) হচ্ছে ‘টাউনিক লেপ্টোন’ যার মধ্যে আছে taus বা ট্যাউস্ (τ -) এবং taus neutrinos বা ট্যাউস্ নিউট্রিনোস্ (V τ) অন্তর্ভুক্ত ।
*১ particle physics বা কণা পদার্থবিদ্যায় হ্যাড্রন (Hadron) হচ্ছে এক ধরণের যৌগিক কণা বা কম্পোজিট পার্টিকেল যা কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত। তড়িৎচুম্বকীয় শক্তির সাহায্যে যেভাবে অণু ও পরমাণুসমূহ পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে, তেমনি কোয়ার্কও পরস্পরের সাথে দৃঢ় শক্তির সাহায্যে সংবদ্ধ থাকে। হ্যাড্রনকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছেঃ ব্যারিয়ন (তিনটি কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত) এবং মেসন (একটি কোয়ার্ক এবং একটি অ্যান্টিকোয়ার্ক দিয়ে গঠিত)।
সবচেয়ে পরিচিত হ্যাড্রনের মধ্যে অন্যতম হলো প্রোটন এবং নিউট্রন (দুটিই ব্যারিয়নশ্রেণীর) ,যেগুলো পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের উপাদান। প্রোটন ছাড়া অন্য সব ধরণের হ্যাড্রন অস্থিতিশীল এবং অন্য ধরণের কণায় পরিবর্তনশীল। সর্বাপেক্ষা জ্ঞাত মেসন হলো পায়োন এবং কায়োন, যেগুলো ১৯৪০-এর শেষার্ধে এবং ১৯৫০-এর প্রথমার্ধে মহাজাগতিক রশ্মি পরীক্ষার সময় আবিষ্কৃত হয়। যদিও এরাই হ্যাড্রনের একমাত্র উদাহরণ নয়; আরো বহু বহু কণা আবিষ্কৃত হয়েছে এবং আবিষ্কারের প্রক্রিয়া চলছে।
অন্যান্য ধরণের হ্যাড্রনও থাকতে পারে, যেমন টেট্রাকোয়ার্ক (অথবা, সাধারণভাবে, exotic meson) এবং পেন্টাকোয়ার্ক (exotic baryon), কিন্তু এদের অস্তিত্বের ব্যাপারে সরাসরি কোনো সমাধানে পৌছার মতো প্রমাণ নেই।
Source
No comments:
Post a Comment