প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং সহজলভ্যতার কারণে বর্তমানে টাচ ফোনের ব্যবহার প্রচুর বেড়ে গেছে। হয়ত অদুর ভবিষ্যতে মোবাইল ফোনে আলাদা করে কোন কিপ্যাডই থাকবে না, সব ফোনই টাচ হয়ে যাবে। বর্তমানে যারা টাচ ফোন ব্যবহার করছেন বা যারা কেনার কথা ভাবছেন তাদের অনেকেরই একটা বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে, তা হল Capacitive Touch Screen এবং Resistive Touch Screen এর পার্থ্যক্য। আমি যথাসম্ভব সহজ ভাষায় সংক্ষিপ্তাকারে পার্থক্যটি বুঝানোর চেষ্টা করলাম।
ক্যাপাসিটিভ টাচ স্ক্রিন:
ক্যাপাসিটিভ টাচ স্ক্রিন হল ইলেক্ট্রিক্যাল চার্জ ধারনে সক্ষম উপাদানের প্রলেপযুক্ত গ্লাস প্যানেল। এটি ইলেক্ট্রিক্যাল চার্জ ধারন করে রাখে। আমরা জানি মানুষের শরীর ও ইলেক্ট্রিক্যাল চার্জ ধারন করতে পারে। যখন মানুষের আঙ্গুল ক্যাপাসিটিভ টাচ স্ক্রিনের কোন স্থানে স্পর্শ করে তখন ঐ স্থানের কিছু চার্জ আঙ্গুলে স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে কমে যায়। টাচ স্ক্রিনের সাথে সংযুক্ত বিশেষ সার্কিট বুঝতে পারে ঠিক কোন স্থানের চার্জ কমে গেছে। সার্কিটটি সেই স্থানের অবস্থান সিস্টেমকে জানায়। এবং সিস্টেম আঙ্গুলের স্পর্শ করার স্থানের কমান্ডটি এক্সিকিউট করে। এপলের আইফোন, আইপ্যাড ইত্যাদিতে সাধারনত ক্যাপাসিটিভ টাচ স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়। ক্যাপাসিটিভ টাচ স্ক্রিনের সুবিধা/অসুবিধা সমূহ নিম্নরুপ:
সুবিধা:
অত্যন্ত টাচ সেনসিটিভ।
মাল্টিটাচ অর্থাৎ একসাথে একাধিক বিন্দুর টাচ সনাক্ত করতে পারে।
উজ্জ্বল সূর্যালোকে ও ডিসপ্লে ভাল দেখা যায়।
ধুলিকণার দ্বারা টাচ সিস্টেম প্রভাবিত হয় না।
মসৃণ ও চকচকে ডিসপ্লে।
অসুবিধা:
টাচ কাজ করার জন্য আপনার আঙ্গুলে কমপক্ষে ৫ শতাংশ আদ্রতা থাকতে হবে।
রেজিষ্টিভ টাচ স্ক্রিনের তুলনায় ব্যয়বহুল।
বিদ্যুৎ অপরিবাহী বস্তুর সাথে কাজ করে না। যেমন: নখ, দস্তানা ইত্যাদি।
এটি নতুন প্রযুক্তি বিধায় অনেক কিছু উন্নয়ন সাধন বাকি আছে।
রেজিষ্টিভ টাচ স্ক্রিন:
রেজিষ্টিভ টাচ স্ক্রিন হল তিন স্থর বিশিষ্ট গ্লাস প্যানেল। এর মধ্যে দুটি স্থর হল কন্ডাকটিভ এবং রেজিষ্টিভ। তৃতীয় এবং উপরের স্থরটি মূলত অপর দুটি স্থরকে স্ক্রেচ বা আঁচর থেকে রক্ষা করে। যখন মানুষের আঙ্গুল রেজিষ্টিভ টাচ স্ক্রিনের কোন স্থানে স্পর্শ করে তখন ঐ স্থানে কন্ডাকটিভ এবং রেজিষ্টিভ স্থরের মধ্যে সংযোগ ঘটে। এর ফলে ঐ স্থানে বিদ্যুৎ প্রবাহের তারতম্য হয়। যা টাচ স্ক্রিনের সাথে সংযুক্ত বিশেষ সার্কিট বুঝতে পারে ঠিক কোন স্থানে বিদ্যুৎ প্রবাহের তারতম্য হয়েছে। সার্কিটটি সেই স্থানের অবস্থান সিস্টেমকে জানায়। এবং সিস্টেম আঙ্গুলের স্পর্শ করার স্থানের কমান্ডটি এক্সিকিউট করে। নকিয়ার টাচ ফোনগুলোতে সাধারনত রেজিষ্টিভ টাচ স্ক্রিনের ব্যবহার বেশি লক্ষ করা যায়। রেজিষ্টিভ টাচ স্ক্রিনের সুবিধা/অসুবিধা সমূহ নিম্নরুপ:
সুবিধা:
অপেক্ষাকৃত সস্তা।
যে কোন বস্তু দ্বারা ব্যবহার করা যায়। যেমন: পেন, স্টাইলাস, নখ ইত্যাদি।
আঙ্গুলের যে কোন আদ্রতায় কাজ করতে পারে। এমনকি দস্তানা পরা অবস্থায় ও কাজ করে।
হাতের লেখা সনাক্ত করতে পারে এই ধরনের সিস্টেমের জন্য বিশেষ উপযোগী।
ক্যাপাসিটিভ টাচ স্ক্রিনের তুলনায় অধিক নির্ভুলভাবে টাচ সনাক্ত করতে পারে।
অপেক্ষাকৃত আগের প্রযুক্তি তাই অনেকটা উন্নয়ন সাধন হয়েছে।
অসুবিধা:
মাল্টিটাচ অর্থাৎ একসাথে একাধিক বিন্দুর টাচ সনাক্ত করতে পারে না। তবে গবেষনা চলছে।
ধুলিকণার দ্বারা টাচ সিস্টেম প্রভাবিত হয়।
উজ্জ্বল সূর্যালোকে ও ডিসপ্লে ভাল দেখা যায় না।
আঁচরের ফলে কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আশা করি টাচ স্ক্রিন নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনারা এখন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
No comments:
Post a Comment