বেশ কয়েক মাস ধরেই আইসিটির বাতাসে একটি শব্দ বেশ প্রবল প্রতাপে উড়ে
বেড়াচ্ছে। শব্দটি হলো আউটসোর্সিং। মাঝে মাঝে কারও কারও সফলতার ইতিহাস
মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার ফলে অনেকেরই আশাবাদ আরও বড় হয়েছে। সাধারণভাবে
বিদেশের কাজ আমাদের দেশে বসে করাটাকেই আমরা আউটসোর্সিং বলি। তবে
প্রকৃতপক্ষে নিজের বা প্রতিষ্ঠানের কাজ বাইরে থেকে চুক্তিভিত্তিতে করানোটাই
আউটসোর্সিং। এমন কাজ দেশের হতে পারে-বিদেশেরও হতে পারে। আমার নিজের করানো
আউটসোর্সিং কাজ উল্লেখ করে আমি আইসিটিভিত্তিক আউটসোর্সিং কাজের দৃষ্টান্ত
দিতে পারি। যশোরের মেয়ে দোলন সরকার যশোরে লেখাপড়া করে। তার নিজের একটি
কম্পিউটার আছে।
সেটি দিয়ে সে আমাদের ডাটা এন্ট্রির কাজ সম্পন্ন করে যশোরে বসেই সে তার চুক্তি অনুসারে পারিশ্রমিক পেয়ে যায়। এটি আউটসোর্সিং। অরিত্র রাজশাহীতে থাকে এবং সেখানে বসেই সে আমাদের জন্য এপ্লিকেশন ডেভেলপ করে দেয়। চুক্তি মাফিক কাজ শেষ হলে আমরা তাকে তার পারিশ্রমিক প্রদান করি। এটিও আউটসোর্সিং। এমনি করে সরকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ড্রাইভার আউটসোর্স করা হতে পারে। কোন কোন ব্যাংক সিকিউরিটি গার্ড আউটসোর্স করে। কেউ কেউ মার্কেটিংয়ের কাজ, কল সেন্টারের কাজ, ডাটা এন্ট্রির কাজ, সেবার কাজ বা অন্য অনেক কাজ আউটসোর্স করে। এমনিভাবে আমরা বিদেশের কাজও করে দিচ্ছি।
এমন একটি সময়ে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান গার্টনারের রিপোর্টে প্রথমে আমরা জানলাম যে, বিদেশের আউটসোর্সিং কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের দেশ দুনিয়ার ৩০টি আউটসোর্সিং দেশের একটিতে ঠাঁই পেয়েছে। বিদেশের আউটসোর্সিং কাজে আমাদের অবস্থান এমনটা মজবুত হওয়ায় আমরা সবাই খুশি হয়েছি। এরপর আমরা শুনলাম যে, ওডেস্কে ঢাকার স্থান চতুর্থ। দুনিয়ার এত দেশ ওডেস্কে কাজ করে এবং আমরা তার মাঝে চতুর্থ স্থানটি পেয়েছি সেটি অবশ্যই পরম আনন্দের। ওডেস্ক হলো আউটসোর্সিং করার একটি বিশ্বখ্যাত ওয়েবসাইট। এরই মাঝে আমরা ই-এশিয়ার মতো সম্মেলন করলাম। ওখানে ওডেস্কের কর্মকর্তা এলেন। ওখানে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী আউটিসোর্সিং কাজ করার উৎসাহ পেল। একই সঙ্গে দেশের অন্তত দুটি প্রধান ট্রেড বডি; বিসিএস ও বেসিস আউটসোর্সিং নিয়ে কর্মশালা করে চলেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ফোরামও এমন কর্মশালা করেছে। সর্বোপরি বেসিস তাদের সফটএক্সপোতে আউটসোর্সিং করার জন্য নানাভাবে তরুণ-তরুণীদের পুরস্কৃত করছে। বেসরকারিভাবে বলা হচ্ছে যে, প্রায় ৫০ হাজার ছেলেমেয়ে আউটসোর্সিং করছে এবং তাদের মাঝে প্রায় ৫০০০ অত্যন্ত সক্রিয় আছে। এদের গত বছরের আয় প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার বলেও প্রচার করা হচ্ছে। এরই মাঝে সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত সাপোর্ট টু ডিজিটাল (এ টু আই) বাংলাদেশ প্রকল্প থেকে বিভিন্ন কলেজে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং নামে একটি প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে। আউটসোর্সিং কাজটিকে ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সম্ভবত এই বিষয়ে কারও কোন দ্বিমত নেই যে, আউটসোর্সিং হলও বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য একটি পরম সম্ভাবনাময় খাত। কিন্তু এ বিষয়ে দৈনিক প্রথম আলোর খবরটি কি সেই সম্ভাবনাকেই তুলে ধরে?
খবরটি এ রকম : “ক্লিক করলেই ডলার-এর ঘোষণার প্রলোভনে পড়ে রাজশাহীতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আউটসোর্সিংয়ের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন। এতে নিজের বিনিয়োগ উঠাতে গিয়ে তাঁদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, বছর খানেক ধরে রাজশাহী নগরে আটটি প্রতিষ্ঠান আউটসোর্সিংয়ের (ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে দেওয়া) কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে : ডুল্যান্সার, অনলাইন অ্যাড ক্লিক, বিডিএস ক্লিক সেন্টার, অনলাইন টু ওয়ার্ক, বিডি অ্যাডক্লিক, স্কাইল্যান্সার, শেরাটনবিডি ও ইপেল্যান্সার। বিশেষত রাজশাহীর বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লোভে পড়ে আউটসোর্সিংয়ের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানে টাকার বিনিময়ে নাম নিবন্ধন করেছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপন দিয়ে মাসে ন্যূনতম দুই হাজার একশত টাকা আয়ের নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
ডুল্যান্সার, শেরাটনবিডি ও অনলাইন অ্যাডক্লিকের সদস্য হতে একজনকে সাত হাজার টাকা এবং বাকি প্রতিষ্ঠানের সদস্য হতে পাঁচ হাজার টাকা থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা নিবন্ধন ফি জমা দিতে হচ্ছে। এরপর সেই সদস্যকে আয় করার জন্য অনলাইনের প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় ঢুকে তাঁদের নির্ধারিত কিছু বিজ্ঞাপনে ক্লিক করতে হচ্ছে। এভাবে একজন সদস্যকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০০টি ক্লিক করলে তাঁর হিসেবে এক ডলার করে জমা হচ্ছে। এই ডলারের হিসাব শুধু প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, ওই সদস্যের নিজের অনলাইন হিসাবে স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। আর ওই সদস্যকে এক ডলারের বিপরীতে দেওয়া হচ্ছে ৬৫ টাকা। সেই টাকা সদস্যকে প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট প্রতিনিধির মাধ্যমে নিতে হচ্ছে।
আর যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার নেই, তাঁদের বিভিন্ন সাইবার ক্যাফেতে ভাড়ার কম্পিউটারে বসে ক্লিক করতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এভাবে নিবন্ধনের টাকা ওঠাতে না পেরে সদস্যরা নতুন সদস্য করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, প্রতিষ্ঠান ভেদে নিয়ম অনুযায়ী একজন সদস্য আরেকজন সদস্য ভর্তি করাতে পারলে তাঁকে সদস্য প্রতি নিবন্ধন ফির কমবেশি ১০ শতাংশ টাকা দেওয়া হয়।
রাজশাহীতে নিজ উদ্যোগে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছেন এমন কয়েকজন জানান, আউটসোর্সিংয়ের জন্য অগ্রিম কোন টাকা জমা দিতে হয় না। কাজ করার পর নিজের অনলাইন অ্যাকাউন্টে সরাসরি ডলার জমা হয়, যা পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে ওঠানো যায়। কিন্তু রাজশাহী নগরের ওই সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করার সদস্যদের ডলার শুধু কম্পিউটারে দেখাচ্ছে। আর প্রতিষ্ঠানগুলো বিল দিচ্ছে টাকায়। এরা আসলে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলেন, তিনি প্রথম সাত হাজার টাকা দিয়ে নগরের এমন একটি প্রতিষ্ঠানে সদস্য হন। প্রতিদিন ১০০ ক্লিক করে ১০ দিন পরে প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় কার্যালয়ে টাকা ওঠাতে গেলে তাঁকে বলা হয়, তিনি নতুন সদস্য না করলে টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তিনি নিজের নিবন্ধন ফির টাকা ওঠাতে এ পর্যন্ত তিনজনকে সদস্য করেছেন। তিনি জানান, দেড় মাস আগে সদস্য হয়ে তিনি এখনও তাঁর নিবন্ধনের টাকা তুলতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, সকাল ৯টার পরে ক্লিক করতে গেলে ১০০ ক্লিক করতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লেগে যায়। প্রলোভনে পড়ে এসব প্রতিষ্ঠানের সদস্য হওয়া রাজশাহীর কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানা গেছে। তাঁরা বলেছেন, প্রতিষ্ঠানগুলো এই ফাঁদে পড়ে তাঁরা আর বের হতে পারছেন না।
গত সোমবার নগরের মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির পাশে মডার্ন ছাত্রাবাসে একটি কক্ষে অনলাইন আউটসোর্সিং কনসালট্যান্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স ঝুলছে। ভেতরে গিয়ে এর স্বত্বাধিকারী শাহরিয়ার কবিরকে পাওয়া যায়। কার্যালয়ে দুটি কম্পিউটার ও একটি ল্যাপটপ রয়েছে। তিনি অবশ্যই নিজেকে প্রতিষ্ঠানের একজন সদস্য দাবি করে বলেন, তাঁর হাতে যেসব সদস্য রয়েছে তাঁদের কাজের সুবিধার জন্য তিনি কক্ষটি ভাড়া নিয়েছেন।
সেখানে দেখা যায় রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী নওগাঁর মশিউর রহমানকে। তিনি একই সঙ্গে ডুল্যান্সার, অনলাইন অ্যাডক্লিক, স্কাইল্যান্সারসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, তাঁর অধীনে প্রায় ২৫০ সদস্য রয়েছে। আউটসোর্সিংয়ের কাজ করলে ডলার সরাসরি নিজের অনলাইন অ্যাকাউন্টে জমা হয় না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওই দুইজন বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় যার আছেন এগুলো তাঁরা বলতে পারবেন।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহার আলী কর্পোরেশনের লাইসেন্স নিয়ে আউটসোর্সিংয়ের নামে প্রতারণার কথা শুনে বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সূত্র : প্রথম আলো।
খবরটি পাঠ করে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেবার সময় অনেক আগেই চলে গেছে। এই ব্যবসাটি আরও একটি যুবকের ব্যবসা হবে কিনা, আরও একটি ডেসটিনি হবে কিনা বা কোন কোন আদম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মতো হায় হায় কোম্পানি হবে কিনা সেই সব বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। বিশেষ করে বেশ বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে সদস্য হওয়া এবং কমিশনের ভিত্তিতে সদস্য যোগাড় করার ফাঁদটি মারাত্মকভাবে প্রতারণামূলক বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। খবরটিতে এই বিষয়টিও খুবই স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই ধরনের ব্যবসা কোন আইনে, কিভাবে করা হচ্ছে তার খবরাখবর নেয়া প্রয়োজন। ওরা মানি লন্ডারিং আইনে পড়ছে কিনা তার খবর রাখাও দরকার। কারণ বিদেশ থেকে উপার্জিত অর্থ দেশে কোন পথে আসছে তার সঠিক তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের জানা একান্তই জরুরী। অন্যদিকে এমএলএম টাইপের যে ব্যবসায় সদস্য সংগ্রহ করার প্রলোভন দেখানো হচ্ছে সেটির ফলে সাধারণ মানুষের যে প্রতারিত হবার সুযোগ তৈরি হচ্ছে সেটিও বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
মনে রাখা দরকার, এই চিত্রটি কেবল রাজশাহীর নয়। বস্তুত পুরো দেশের চিত্রই এ রকম। ঢাকার অবস্থা তার মাঝে সবচেয়ে খারাপ। আমার মনে হচ্ছে, একটি ভয়ঙ্কর রকমের প্রতারণার ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে আউটসোর্সিং নামক এই খাত। আমি অবাক হয়েছি এটি দেখে যে, প্রতিদিন নতুন নতুন ওয়েবসাইটের জন্ম হচ্ছে এবং সেইসব ওয়েবসাইট থেকে দেশব্যাপী এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আমরা ইন্টারনেটে খোঁজ নিয়ে বাংলাদেশে সক্রিয় বেশ কতগুলো ওয়েবসাইটের সন্ধান পেয়েছি। এসব সাইটের কোনটি সঠিক এবং কোনটি কোন পদ্ধতিতে কাজ করে তা আমার জানা নেই। তবে অনুসন্ধান করে দেখা যেতে পারে যে, রাজশাহী থেকে পাঠানো খবরটির মতো পদ্ধতি কোন কোন ওয়েবসাইটে প্রয়োগ করা হয়। ওয়েবসাইটগুলো হলো : dolancer.com, silancers.com, siwalkerltd.com, quickpaybd.com, .microclicker.com, neswheratonbd.com, w.wonlinenet2work.com, bestonlinesourcing.com, onlineaddclick.com,
ইন্টারনেটে এসব ওয়েবসাইট থেকে কিভাবে কাজ করানো হয় সে বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানা যেতে পারে এই লিঙ্কগুলো থেকে bdfreelancing.com, adssourcing.com, safetzclick.net। প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে আমরা জানলাম যে, এইসব কোম্পানির এজেন্টরা এমএলএম কোম্পানির মতো এমন জাল বিস্তার করছে যে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোন পথ আর খোলা নেই। এইসব কোম্পানির প্রায় সকলেই সিটি কর্পোরেশন বা মিউনিসিপালিটি থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করছে। টিন নাম্বার নিচ্ছে এবং প্রকাশ্যে ব্যবসা করছে। কেউ কেউ লিমিটেড কোম্পানি করছে এবং তাতে এ ধরনের ব্যবসা করার কথা উল্লেখ করছে। কোন কোন কোম্পানি আমার মতো কারও নাম ব্যবহার করছে এবং সাধারণ তরুণ-তরুণীদের বিভ্রান্ত করছে। সরকার এমন অবস্থাতে চুপ করে বসে থাকতে পাওে না।
সেটি দিয়ে সে আমাদের ডাটা এন্ট্রির কাজ সম্পন্ন করে যশোরে বসেই সে তার চুক্তি অনুসারে পারিশ্রমিক পেয়ে যায়। এটি আউটসোর্সিং। অরিত্র রাজশাহীতে থাকে এবং সেখানে বসেই সে আমাদের জন্য এপ্লিকেশন ডেভেলপ করে দেয়। চুক্তি মাফিক কাজ শেষ হলে আমরা তাকে তার পারিশ্রমিক প্রদান করি। এটিও আউটসোর্সিং। এমনি করে সরকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ড্রাইভার আউটসোর্স করা হতে পারে। কোন কোন ব্যাংক সিকিউরিটি গার্ড আউটসোর্স করে। কেউ কেউ মার্কেটিংয়ের কাজ, কল সেন্টারের কাজ, ডাটা এন্ট্রির কাজ, সেবার কাজ বা অন্য অনেক কাজ আউটসোর্স করে। এমনিভাবে আমরা বিদেশের কাজও করে দিচ্ছি।
এমন একটি সময়ে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান গার্টনারের রিপোর্টে প্রথমে আমরা জানলাম যে, বিদেশের আউটসোর্সিং কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের দেশ দুনিয়ার ৩০টি আউটসোর্সিং দেশের একটিতে ঠাঁই পেয়েছে। বিদেশের আউটসোর্সিং কাজে আমাদের অবস্থান এমনটা মজবুত হওয়ায় আমরা সবাই খুশি হয়েছি। এরপর আমরা শুনলাম যে, ওডেস্কে ঢাকার স্থান চতুর্থ। দুনিয়ার এত দেশ ওডেস্কে কাজ করে এবং আমরা তার মাঝে চতুর্থ স্থানটি পেয়েছি সেটি অবশ্যই পরম আনন্দের। ওডেস্ক হলো আউটসোর্সিং করার একটি বিশ্বখ্যাত ওয়েবসাইট। এরই মাঝে আমরা ই-এশিয়ার মতো সম্মেলন করলাম। ওখানে ওডেস্কের কর্মকর্তা এলেন। ওখানে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী আউটিসোর্সিং কাজ করার উৎসাহ পেল। একই সঙ্গে দেশের অন্তত দুটি প্রধান ট্রেড বডি; বিসিএস ও বেসিস আউটসোর্সিং নিয়ে কর্মশালা করে চলেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ফোরামও এমন কর্মশালা করেছে। সর্বোপরি বেসিস তাদের সফটএক্সপোতে আউটসোর্সিং করার জন্য নানাভাবে তরুণ-তরুণীদের পুরস্কৃত করছে। বেসরকারিভাবে বলা হচ্ছে যে, প্রায় ৫০ হাজার ছেলেমেয়ে আউটসোর্সিং করছে এবং তাদের মাঝে প্রায় ৫০০০ অত্যন্ত সক্রিয় আছে। এদের গত বছরের আয় প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার বলেও প্রচার করা হচ্ছে। এরই মাঝে সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত সাপোর্ট টু ডিজিটাল (এ টু আই) বাংলাদেশ প্রকল্প থেকে বিভিন্ন কলেজে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং নামে একটি প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে। আউটসোর্সিং কাজটিকে ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সম্ভবত এই বিষয়ে কারও কোন দ্বিমত নেই যে, আউটসোর্সিং হলও বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য একটি পরম সম্ভাবনাময় খাত। কিন্তু এ বিষয়ে দৈনিক প্রথম আলোর খবরটি কি সেই সম্ভাবনাকেই তুলে ধরে?
খবরটি এ রকম : “ক্লিক করলেই ডলার-এর ঘোষণার প্রলোভনে পড়ে রাজশাহীতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আউটসোর্সিংয়ের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন। এতে নিজের বিনিয়োগ উঠাতে গিয়ে তাঁদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, বছর খানেক ধরে রাজশাহী নগরে আটটি প্রতিষ্ঠান আউটসোর্সিংয়ের (ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে দেওয়া) কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে : ডুল্যান্সার, অনলাইন অ্যাড ক্লিক, বিডিএস ক্লিক সেন্টার, অনলাইন টু ওয়ার্ক, বিডি অ্যাডক্লিক, স্কাইল্যান্সার, শেরাটনবিডি ও ইপেল্যান্সার। বিশেষত রাজশাহীর বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লোভে পড়ে আউটসোর্সিংয়ের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানে টাকার বিনিময়ে নাম নিবন্ধন করেছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপন দিয়ে মাসে ন্যূনতম দুই হাজার একশত টাকা আয়ের নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
ডুল্যান্সার, শেরাটনবিডি ও অনলাইন অ্যাডক্লিকের সদস্য হতে একজনকে সাত হাজার টাকা এবং বাকি প্রতিষ্ঠানের সদস্য হতে পাঁচ হাজার টাকা থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা নিবন্ধন ফি জমা দিতে হচ্ছে। এরপর সেই সদস্যকে আয় করার জন্য অনলাইনের প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় ঢুকে তাঁদের নির্ধারিত কিছু বিজ্ঞাপনে ক্লিক করতে হচ্ছে। এভাবে একজন সদস্যকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০০টি ক্লিক করলে তাঁর হিসেবে এক ডলার করে জমা হচ্ছে। এই ডলারের হিসাব শুধু প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, ওই সদস্যের নিজের অনলাইন হিসাবে স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। আর ওই সদস্যকে এক ডলারের বিপরীতে দেওয়া হচ্ছে ৬৫ টাকা। সেই টাকা সদস্যকে প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট প্রতিনিধির মাধ্যমে নিতে হচ্ছে।
আর যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার নেই, তাঁদের বিভিন্ন সাইবার ক্যাফেতে ভাড়ার কম্পিউটারে বসে ক্লিক করতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এভাবে নিবন্ধনের টাকা ওঠাতে না পেরে সদস্যরা নতুন সদস্য করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, প্রতিষ্ঠান ভেদে নিয়ম অনুযায়ী একজন সদস্য আরেকজন সদস্য ভর্তি করাতে পারলে তাঁকে সদস্য প্রতি নিবন্ধন ফির কমবেশি ১০ শতাংশ টাকা দেওয়া হয়।
রাজশাহীতে নিজ উদ্যোগে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছেন এমন কয়েকজন জানান, আউটসোর্সিংয়ের জন্য অগ্রিম কোন টাকা জমা দিতে হয় না। কাজ করার পর নিজের অনলাইন অ্যাকাউন্টে সরাসরি ডলার জমা হয়, যা পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে ওঠানো যায়। কিন্তু রাজশাহী নগরের ওই সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করার সদস্যদের ডলার শুধু কম্পিউটারে দেখাচ্ছে। আর প্রতিষ্ঠানগুলো বিল দিচ্ছে টাকায়। এরা আসলে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলেন, তিনি প্রথম সাত হাজার টাকা দিয়ে নগরের এমন একটি প্রতিষ্ঠানে সদস্য হন। প্রতিদিন ১০০ ক্লিক করে ১০ দিন পরে প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় কার্যালয়ে টাকা ওঠাতে গেলে তাঁকে বলা হয়, তিনি নতুন সদস্য না করলে টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তিনি নিজের নিবন্ধন ফির টাকা ওঠাতে এ পর্যন্ত তিনজনকে সদস্য করেছেন। তিনি জানান, দেড় মাস আগে সদস্য হয়ে তিনি এখনও তাঁর নিবন্ধনের টাকা তুলতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, সকাল ৯টার পরে ক্লিক করতে গেলে ১০০ ক্লিক করতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লেগে যায়। প্রলোভনে পড়ে এসব প্রতিষ্ঠানের সদস্য হওয়া রাজশাহীর কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানা গেছে। তাঁরা বলেছেন, প্রতিষ্ঠানগুলো এই ফাঁদে পড়ে তাঁরা আর বের হতে পারছেন না।
গত সোমবার নগরের মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির পাশে মডার্ন ছাত্রাবাসে একটি কক্ষে অনলাইন আউটসোর্সিং কনসালট্যান্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স ঝুলছে। ভেতরে গিয়ে এর স্বত্বাধিকারী শাহরিয়ার কবিরকে পাওয়া যায়। কার্যালয়ে দুটি কম্পিউটার ও একটি ল্যাপটপ রয়েছে। তিনি অবশ্যই নিজেকে প্রতিষ্ঠানের একজন সদস্য দাবি করে বলেন, তাঁর হাতে যেসব সদস্য রয়েছে তাঁদের কাজের সুবিধার জন্য তিনি কক্ষটি ভাড়া নিয়েছেন।
সেখানে দেখা যায় রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী নওগাঁর মশিউর রহমানকে। তিনি একই সঙ্গে ডুল্যান্সার, অনলাইন অ্যাডক্লিক, স্কাইল্যান্সারসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, তাঁর অধীনে প্রায় ২৫০ সদস্য রয়েছে। আউটসোর্সিংয়ের কাজ করলে ডলার সরাসরি নিজের অনলাইন অ্যাকাউন্টে জমা হয় না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওই দুইজন বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় যার আছেন এগুলো তাঁরা বলতে পারবেন।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহার আলী কর্পোরেশনের লাইসেন্স নিয়ে আউটসোর্সিংয়ের নামে প্রতারণার কথা শুনে বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সূত্র : প্রথম আলো।
খবরটি পাঠ করে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেবার সময় অনেক আগেই চলে গেছে। এই ব্যবসাটি আরও একটি যুবকের ব্যবসা হবে কিনা, আরও একটি ডেসটিনি হবে কিনা বা কোন কোন আদম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মতো হায় হায় কোম্পানি হবে কিনা সেই সব বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। বিশেষ করে বেশ বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে সদস্য হওয়া এবং কমিশনের ভিত্তিতে সদস্য যোগাড় করার ফাঁদটি মারাত্মকভাবে প্রতারণামূলক বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। খবরটিতে এই বিষয়টিও খুবই স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই ধরনের ব্যবসা কোন আইনে, কিভাবে করা হচ্ছে তার খবরাখবর নেয়া প্রয়োজন। ওরা মানি লন্ডারিং আইনে পড়ছে কিনা তার খবর রাখাও দরকার। কারণ বিদেশ থেকে উপার্জিত অর্থ দেশে কোন পথে আসছে তার সঠিক তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের জানা একান্তই জরুরী। অন্যদিকে এমএলএম টাইপের যে ব্যবসায় সদস্য সংগ্রহ করার প্রলোভন দেখানো হচ্ছে সেটির ফলে সাধারণ মানুষের যে প্রতারিত হবার সুযোগ তৈরি হচ্ছে সেটিও বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
মনে রাখা দরকার, এই চিত্রটি কেবল রাজশাহীর নয়। বস্তুত পুরো দেশের চিত্রই এ রকম। ঢাকার অবস্থা তার মাঝে সবচেয়ে খারাপ। আমার মনে হচ্ছে, একটি ভয়ঙ্কর রকমের প্রতারণার ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে আউটসোর্সিং নামক এই খাত। আমি অবাক হয়েছি এটি দেখে যে, প্রতিদিন নতুন নতুন ওয়েবসাইটের জন্ম হচ্ছে এবং সেইসব ওয়েবসাইট থেকে দেশব্যাপী এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আমরা ইন্টারনেটে খোঁজ নিয়ে বাংলাদেশে সক্রিয় বেশ কতগুলো ওয়েবসাইটের সন্ধান পেয়েছি। এসব সাইটের কোনটি সঠিক এবং কোনটি কোন পদ্ধতিতে কাজ করে তা আমার জানা নেই। তবে অনুসন্ধান করে দেখা যেতে পারে যে, রাজশাহী থেকে পাঠানো খবরটির মতো পদ্ধতি কোন কোন ওয়েবসাইটে প্রয়োগ করা হয়। ওয়েবসাইটগুলো হলো : dolancer.com, silancers.com, siwalkerltd.com, quickpaybd.com, .microclicker.com, neswheratonbd.com, w.wonlinenet2work.com, bestonlinesourcing.com, onlineaddclick.com,
ইন্টারনেটে এসব ওয়েবসাইট থেকে কিভাবে কাজ করানো হয় সে বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানা যেতে পারে এই লিঙ্কগুলো থেকে bdfreelancing.com, adssourcing.com, safetzclick.net। প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে আমরা জানলাম যে, এইসব কোম্পানির এজেন্টরা এমএলএম কোম্পানির মতো এমন জাল বিস্তার করছে যে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোন পথ আর খোলা নেই। এইসব কোম্পানির প্রায় সকলেই সিটি কর্পোরেশন বা মিউনিসিপালিটি থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করছে। টিন নাম্বার নিচ্ছে এবং প্রকাশ্যে ব্যবসা করছে। কেউ কেউ লিমিটেড কোম্পানি করছে এবং তাতে এ ধরনের ব্যবসা করার কথা উল্লেখ করছে। কোন কোন কোম্পানি আমার মতো কারও নাম ব্যবহার করছে এবং সাধারণ তরুণ-তরুণীদের বিভ্রান্ত করছে। সরকার এমন অবস্থাতে চুপ করে বসে থাকতে পাওে না।
No comments:
Post a Comment