Thursday, September 15, 2011

এলাকাবাসীর অর্থে নির্বাচিত চেয়ারম্যান অতঃপর কোটিপতি!


'এডা বাড়ি না, মজিদ চেয়ারম্যানের স্বর্ণমঞ্জিল। এ রকম বাড়ি এই গেরামে আর একটাও নাই। আশপাশের দশ গেরামেও নাই। আগে তেমুন কিছু আছিল না। এমপিও তাঁক ভালোবাসে, তাই এত কিছু করতে পারিছে। আবদুল মজিদের এই বাড়ির কোনো নাম দেওয়া না হলেও এলাকাবাসী বাড়িটিকে স্বর্ণমঞ্জিল নামে ডাকে।'
এলাকাবাসীর অর্থ সাহায্যে উপজেলা নির্বাচন করলেও চেয়ারম্যান হওয়ার পর প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে দুর্গাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মজিদ তাঁর গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুরের ব্রহ্মপুরে একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। হঠাৎ কোটিপতি হওয়ায় গত রবিবার এভাবেই অভিমত ব্যক্ত করেন মজিদেরই প্রতিবেশী শাহানারা বেগম।
উল্লেখ্য, মজিদ চেয়ারম্যান দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি। গত উপজেলা নির্বাচনে মজিদ তাঁর হিসাব বিবরণীতে নগদ ৩০ হাজার টাকার সম্পদের কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু এই দেড় বছরের মধ্যেই কিভাবে তিনি কোটি টাকা ব্যয়ে দুর্গাপুরের ব্রহ্মপুর গ্রামে একটি বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করেন, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী।
তবে কোটি টাকা ব্যয়ের কথা অস্বীকার করে দুর্গাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, '১৫-২০ লাখ টাকা ব্যয় করে বাড়িটি নির্মাণ করেছি। আমার নিজস্ব ২৫ বিঘা জমি আছে। এ ছাড়া দুটি পুকুর আছে। সেখান থেকে প্রতিবছর অন্তত তিন লাখ টাকা আয় হয়। সেই টাকা দিয়েই বাড়ি নির্মাণ করেছি।'
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুর্গাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ সর্দারের পৈতৃক ভিটা, দুটি পুকুর আর কিছু ফসলি জমি ছাড়া দেড় বছর আগেও কিছুই ছিল না। কিন্তু সেই মজিদ চেয়ারম্যান এখন কোটিপতি। সমপ্রতি তিনি কোটি টাকা ব্যয় করে তাঁর গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুরের ব্রহ্মপুরে পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের একতলা একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। অথচ ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের জন্য এই মজিদকে এলাকার লোকজন চাঁদা তুলে টাকা দিয়েছিল নির্বাচনে ব্যয় করতে। এরপর নির্বাচনে জয়ী হয়ে মাত্র দেড় বছরের মাথায় কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করেন তিনি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কফিল উদ্দিনসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো অনেকেই জানান, এলাকার লোকজনের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন করেন। সেই নির্বাচনে জয়ী হন।
তিনি টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ ও অন্যান্য উপকরণ আত্মসাৎ এবং প্রকল্প থেকে কমিশন বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে আয় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ৭২ জন সাব-ডিলার নিয়োগ দিয়ে তিনি প্রায় ৫০ লাখ টাকা কামিয়েছেন ওই সব ডিলারের কাছ থেকে।
কফিল উদ্দিন আরো জানান, মজিদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এ ধরনের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রায় পাঁচ মাস আগে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কফিল উদ্দিন নিজেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি ফ্যাঙ্ পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলে, এই বাড়ির যে আসবাবপত্র তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি বড় মেহগনি গাছ কেটে করা হয়েছে। মজিদ চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই খবির উদ্দিন বলেন, 'ব্রহ্মপুর গ্রামে মজিদের নিজস্ব কোনো বাড়ি ছিল না। ২০০১ সালের আগে সে তাঁর বড় ভাইয়ের বাড়িতেই থাকত। এরপর বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে সে রাজশাহীতে পালিয়ে গিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। সেখান থেকে সমপ্রতি মজিদ তার নিজের করা ব্রহ্মপুরের নতুন বাড়িতে এসে উঠেছে। এক বছর আগে সে এক কোটি টাকারও বেশি খরচ করে বাড়িটি নির্মাণ করেছে। এ বাড়িতেই এখন সপরিবারে বসবাস করে মজিদ।'
বাড়ি নির্মাণ সম্পর্কে আবদুল মজিদ আরো বলেন, 'দল ক্ষমতায় গেলে ব্যবসা-বাণিজ্য করার কিছু সুযোগ থাকে। পাশাপাশি সেটিও করি। সেখান থেকেও অনেক টাকা আয় হয়।' তবে কী ব্যবসা করেন জানতে চাইলে তিনি সেটা বলতে চাননি।
বাড়ি নিয়ে এলাকাবাসীর কৌতূহল এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মজিদ বলেন, 'ভালো কিছু করতে গেলে এলাকার কিছু লোকজন সব সময় বিরোধিতা করে। তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেউ কোনো অভিযোগ দিয়েছে কি না, তা আমার জানা নাই।'

No comments:

Post a Comment

ওয়ানপ্লাসের নতুন অক্সিজেন ওএস ১৫ আসছে AI নিয়ে

  অ্যান্ড্রয়েড ১৫  এর ওপর ভিত্তি করে আসছে  ওয়ানপ্লাসের  অক্সিজেন    ওএস  ১৫। অক্টোবরের ২৪ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত ৯:৩০ এ আনুষ্ঠানিকভাবে অপ...