Sunday, September 18, 2011

তারকা থেকে ব্ল্যাকহোলে রূপান্তর- এই তথ্যটি কিরূপে আল-কোরআনে এলো? সত্যিই অবাক লাগে!

এর আগের পোষ্টে ব্ল্যাকহোলের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল-কোরআনে কি তথ্য রয়েছে সে বিষয়ে বলেছি।
বিস্তারিত জানতে চাইলে- "ব্ল্যাকহোল" সম্পর্কে নিখুঁত তথ্যগুলো আল-কোরআনে কিভাবে এলো?- তা সত্যিই ভাবায়

এবার আসুন- আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করি। শুধু বৈশিষ্ট্যের কথাই নয়, কোন ধরনের তারকা ব্ল্যাকহোলে রূপান্তরিত হয় সেই মৌলিক তথ্যটিও রয়েছে এ মহাগ্রন্থে।

বিজ্ঞান-
*(কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস) - থেকে সংগৃহিত তথ্যমতে--কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল কিভাবে তৈরী হয় সেটা বুঝতে হলে একটি তারকার জীবনচক্র সম্পর্কে ধারণা নেয়া প্রয়োজন। শেষ পর্যন্ত একটি তারকার হাইড্রোজেন ও অন্যান্য পারমাণবিক জ্বালানী ফুরিয়ে যায়। একটি স্ববিরোধী ব্যাপার হলো:- শুরুতে একটি তারকার জ্বালানী যত বেশী থাকে, তার জ্বালানী ফুরিয়েও যায় তত তাড়াতাড়ি। এর কারণ, তারকাটির ভর যত বেশী হয় মহাকর্ষীয় আকর্ষণের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার জন্য তাকে তত বেশী উত্তপ্ত হতে হয়। আর তারকাটি যত বেশী উত্তপ্ত হয় তার জ্বালানীও তত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়।
আল-কোরআন-
সূরা নাযিয়াত -(79.An-Naziat // Those Who Drag Forth)-সূরা নং-৭৯,আয়াত নং-১ ও ২
(৭৯:১)- অন্না-যি‘আ-তি গ্বারক্বাওঁ
(৭৯:১) অর্থ- শপথ তাদের, যারা নির্মমভাবে উৎপাটন করে বা পদচ্যুত করে বা নামিয়ে আনে।

(৭৯:২)- অন্না - শিত্বা-তি নাশতাওঁ ,
(৭৯:২) অর্থ:-- এবং যারা বাঁধন খুলে বন্ধন মুক্ত করে দেয়।

সূরা নযিয়াত-(79.An-Naziat // Those Who Drag Forth)-সূরা নং-৭৯, আয়াত নং-৩, ৪ ও ৫
(৭৯:৩)- আছ্ছা-বিহা-তি ছাবহা,

[এখানে, সাবেহুন =(অর্থ) সন্তরণকারী ।
সা-বেহা-তুন =(অর্থ) তারকা -(আল-কাওসার)-মদীনা পাবলিকেশন্স।]

(৭৯:৩) অর্থ- শপথ, সন্তরণকারী তারকাসমূহের,
(79 : 3)=I swear by the swimming stars,

(৭৯:৪)- ফাছ্ছা-বিক্বা-তি ছাবক্বা।
(৭৯:৪) অর্থ- যারা দ্রুত কার্য সম্পন্ন করে।
(79 : 4)=Those who perform their business quickly.

(৭৯:৫)- ফাল মুদাব্বিরা-তি আমরা।
(৭৯:৫) অর্থ- যারা নির্দেশিত সকল কার্যনির্বাহ করে - তোমরা পুণরুত্থিত হবেই।
(79 : 5)=Those who fulfill their duties according to the commend/direction – you shall rise again from the dead.

আলোচনা-
আমরা পূর্বেই দেখেছি যে, সূরা নাযিয়াতের (৭৯:১) ও (৭৯:২) নং আয়াতে ব্ল্যাকহোলের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে - এখানে আমি (শপথ তাদের, যারা নির্মমভাবে উৎপাটন করে বা পদচ্যুত করে বা নামিয়ে আনে) এবং (যারা বাঁধন খুলে বন্ধন মুক্ত করে দেয়) এই বাক্য দুটির মধ্যে 'তাদের' এবং 'যারা' এই শব্দ দুটি দ্বারা কেন ব্ল্যাকহোলকে নির্দেশ করলাম? আমরা জানি যে, প্রায় সকল ভাষায় কোন একটি শব্দের খুব কাছাকাছি বেশ কয়েকটি অর্থ হতে পারে। তবে সেই শব্দটি কোথায় কিভাবে ব্যবহৃত হলো সেটাই বিবেচ্য বিষয়।

এ বিষয়টি বুঝতে হলে ৭৯ নং সূরারই ঠিক তার পরের (৭৯:৩) ও (৭৯:৪) নং আয়াতের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

দেখা যাচ্ছে (৭৯:৩) নং আয়াতে (শপথ, সন্তরণকারী তারকাসমূহের) সন্তরনকারী তারকাসমূহের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে। বিজ্ঞানের বর্ননায় আমরা দেখেছি যে, তারকাগুলোই পরবর্তীতে কৃষ্ণগহ্বরে রূপান্তরিত হয়।

সুতরাং এই (৭৯:৩) ও (৭৯:৪) নং আয়াত দুটি থেকে নিশ্চয় এখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, (৭৯:১) ও (৭৯:২) নং আয়াতে শপৎ তাদের ও যারা শব্দ দ্বারা আসলে বিশেষ কিছু তারকার দিকেই নির্দেশ করা হয়েছে।

সেই সাথে (৭৯:৪) নং আয়াতে (যারা দ্রুত কার্য সম্পন্ন করে) কোন ধরনের তারকা সেই দিকে ইংগিত দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ যেসব তারকা বা নক্ষত্র দ্রুততার সাথে কার্য সম্পন্ন করে সেগুলোর কথাই বোঝান হয়েছে। বিজ্ঞানের বর্ণনায় আমরা এটাও জেনেছি যে, তারকার কাজ হলো পারমাণবিক জ্বালানী জ্বালীয়ে শেষ করা এবং যে তারকার ভর যত বেশী সেই তারকা তার জ্বালানী তত দ্রুত জ্বালীয়ে শেষ করে। সুতরাং (৭৯:৪) নং আয়াতে দ্রুত কার্য-সম্পন্নকারী তারকা বলতে যে সমস্ত তারকা তাদের জ্বালানী দ্রুত জ্বালীয়ে শেষ করে সেগুলোকে বোঝানো হয়েছে, অর্থাৎ পরোক্ষভাবে এখানে অধিক ভরসম্পন্ন তারকার প্রতিই ইংগিত দেয়া হয়েছে। আমরা এটাও জানি যে, সুপারনোভা বিষ্ফোরনের পর সূর্যের চেয়ে অনেক বড় তারকাগুলোর কেন্দ্রের ভর যদি প্রায় তিনগুণ বা তার বেশী হয় তবে সেগুলো অবশেষে কৃষ্ণগহ্বরে রূপান্তরিত হতে পারে।

এরপর (৭৯:৫) নং আয়াতে (যারা নির্দেশিত সকল কার্যনির্বাহ করে - তোমরা পুণরুত্থিত হবেই) অধিক ভরসম্পন্ন তারকাদের মধ্য থেকে যেগুলো কৃষ্ণগহ্বরে রূপান্তরিত হচ্ছে এদের কাজ সম্পর্কেও ইংগিত দেয়া হয়েছে। অল্লাহতায়ালার নির্দেশমত বিশেষ বিশেষ কাজগুলো সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য যে তারা নিয়োজিত, এই বিষয়টি এখানে ফুটে উঠেছে। যেহেতু এই আয়াতের শেষে এবং বিশেষ করে (৭৯:১০, ১১, ১২) নং আয়াতে পুণরুত্থানের সময় সম্পর্কে বক্তব্য এসেছে। সুতরাং প্রতি-বস্তু জগৎ সৃষ্টি এবং কিয়ামত বা মহাপ্রলয় সংঘনের কোন বিশেষ প্রক্রিয়ার সাথে মহান আল্লাহপাক এগুলোকে নিয়োজিত রেখেছেন কিনা তা ভেবে দেখবার বিষয়।

আল-কোরআনে এ ধরনের আরও অনেক শব্দ ও আয়াত এসেছে যেগুলো যখন নাজিল হয়েছিল শুধু তথনকার জন্য নয়, বরং কেয়ামত পর্যন্ত সঠিক অর্থ বোঝানোর জন্যই মহান স্রষ্টা এগুলোকে সেভাবেই ব্যবহার করেছেন। মানুষের জ্ঞানের পরিধি যত বিস্তৃত হবে, সে চিন্তা-ভাবনা করলে তত সূক্ষ্মভাবে তার অর্থ বুঝতে সক্ষম হবে। একজন উম্মী নবীর পক্ষে মহান স্রষ্টার সাহায্য ছাড়া এধরনের বিসম্য়কর অকাট্য বৈজ্ঞানীক তথ্যগুলো আল-কোরআনে নির্ভুলভাবে তুলে ধরা যে কখনই সম্ভব ছিলনা- একজন সত্যান্বেষী সরলমনা মানুষ মাত্রই তা সহজেই বুঝে নেবে।

"মহান স্রষ্টা যে আছেন" আল-কোরআনই তার নিরন্তর জ্জ্বলন্ত প্রমান। এটি নিছক কোন বিজ্ঞানের বই নয়। তাই এতে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও ত্বত্ত্বগুলোর বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে ঐশী ইংগিত দেয়া হয়েছে মাত্র। সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে একজন ইমানদার যখন আল-কোরআন ও বিজ্ঞানের চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে গভীর চিন্তা-গবেষণায় রত হয়, তখন পরম শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসে জগৎসমূহের স্রষ্টা সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান এক আল্লাহর সামনে মাথা নত করতে সে বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত হয় না। আল-কোরআন যে স্বয়ং মহান স্রষ্টা প্রেরিত পথপ্রদর্শনকারী মহাগ্রন্থ তা জ্ঞানী ও সরলমনা বিশ্বাসীরা তখন নির্দিধায় মেনে নেয়।।এভাবে অল্লাহতায়ালা বার বার প্রমাণ করে দেখান যে, আল-কোরআনে প্রদত্ত বৈজ্ঞানিক ঐশী তথ্যগুলো যেমন সত্য, ঐশী আইন-কানুনগুলোও তেমনই অকাট্য ও সত্য এবং সর্বকালেই কল্যাণকর। মহান স্রষ্টা চান, বিশ্বাসী মানুষেরা যেন এইসব ঐশী তথ্য সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণাব মধ্য দিয়ে আধুনিক আবিষ্কারগুলোকে যাঁচাই করে নিয়ে প্রকৃত সত্যের সন্ধান লাভ করতে পারে এবং আল্লাহর মহত্ব ও করুণার কথা স্মরণ করার সাথে সাথে একমাত্র তাঁরই কাছে মাথা নত করে।

No comments:

Post a Comment

ওয়ানপ্লাসের নতুন অক্সিজেন ওএস ১৫ আসছে AI নিয়ে

  অ্যান্ড্রয়েড ১৫  এর ওপর ভিত্তি করে আসছে  ওয়ানপ্লাসের  অক্সিজেন    ওএস  ১৫। অক্টোবরের ২৪ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত ৯:৩০ এ আনুষ্ঠানিকভাবে অপ...