আমরা কেন এরকম হয়ে যাচ্ছি?
কয়েকদিন আগে বাসে একটা অদ্ভুত ঘটনা দেখে এই প্রশ্নটা মাথায় এল: আমরা কেন এরকম হয়ে যাচ্ছি? শাহবাগ মোাড় থেকে বাস ছেড়েছে, গেটের কাছে প্রচণ্ড ভীড়, বাইরেই ঝুলছে ৩-৪ জন। আর ঐ সময়টাতে রাস্তায় এত ভীড় যে, যে কোন সময়েই ঐ বাইরে ঝোলা মানুষগুলো একটা ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। অথচ ভেতরের দিকে বেশ খানিকটা জায়গা ফাঁকা। ভিতরের মানুষগুলো আরও কিছুটা ভিতরে চলে গেলেই একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব। কন্ট্রাকটরও ক্রমাগত সেই কথা বলে যাচ্ছে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে এক মাঝবয়েসি ভদ্রলোক তাঁর পাশে দাঁড়ানো দুই ছেলের কাছে জানতে চাইলেন যে, তারা কোথায় যাবে। উত্তরটা গাবতলী শুনে তিনি ছেলেগুলোকে ভিতরে চলে যেতে বললেন। মোটামোটি ভদ্র পরিচ্ছিত পোশাক পরা এক ছেলে তার বন্ধুকে ইশারা করল না যেতে। আরেকজন কিছুক্ষণ পরে নিচুস্বরে বলল, “গ্যালেই বইস্যা পরব”। আমি তাদের ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরে কিছুক্ষণ হতাবিহ্বল হয়ে বসে থাকলাম। তারা আসলে মনে করেছে যে, ঐ মাঝবয়েসি ভদ্রলোকটা একটা সিট দখল করার জন্য তাদেরকে ভেতরে ঠেলে দিতে চেয়েছে। বাসের ওপারে রাস্তাঘাটের চেহারাটা এমন, তারা ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে বাইরে যে দু-একজন মরেও যেতে পারে সেটাও তারা গ্রাহ্য করছে না। সামান্য একটা সিট দখলের জন্য তারা সেখানেই দাড়িয়ে থাকছে। অল্প কিছুক্ষণ আরাম করার জন্য তারা দুই হাত দূরের একটা লোকের জীবন-মরণ নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছে না। আমরা কেন এরকম হয়ে যাচ্ছি? নিজের ছোট ছোট সুযোগ সুবিধা, আরাম আয়েশের জন্য আমরা বাকি দুনিয়ার কথা কিছুই ভাবছি না। বা অনেক সময় অগ্রাহ্য করছি। সামান্য সামান্য ব্যাপারে আমরা কেন এরকম স্বার্থপর আচরণ করছি?
মনুষ্য প্রজাতির কী এমনটা করার কথা? মানুষ না আশরাফুল মাখলুকাত? সৃষ্টির সেরা জীব? বহু সাধ-সাধনার পর নাকি এই মানব জন্ম পাওয়া যায়? এমনকি এই মানবজন্ম নেওয়ার জন্য নাকি দেব-দেবতারাও আরাধনা করেন??? এ যদি সত্যি হয় তাহলে এই মহামূল্যবান সময়টুকু কী আমরা এভাবে পার করে দেব? আচ্ছা মানব-জন্মের উদ্দেশ্য-বিধেয় যাচাই-বিচার তো আরও অনেক দূরের কথা। আমরা যদি শুধু নিজের কথাও ভাবি, তাহলেও কী এখন আমাদের একটু সমবেদনশীল, সহযোগিতামূলক মানসিকতা গড়ে তোলা দরকার না? আমরা যে খুব সংকটপূর্ণ একটা সময় পার করছি!!! আমরা এমন একটা সময় পার করছি, যখন আমাদের খোদ নিজের অস্তিত্বটাই বিপন্ন!
No comments:
Post a Comment