Thursday, September 22, 2011

ব্ল্যাকহোল নিয়ে নতুন হাইপোথেসিস

ভিয়াচেসলেভ ডকুচায়েভ। একজন রুশ পদার্থবিদ। চাকরি করেন মস্কো ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার রিসার্চে। তিনি সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন এক সংবেদনশীল হাইপোথেসিস বা প্রকল্পের কথা। হাইপোথেসিস বলতে আমরা এমন কিছু প্রমাণার্থকে বুঝি, যা সত্য বলে ধরে নেয়া হয়েছে। তার এ হাইপোথেসিস হচ্ছে, তথাকথিত ব্ল্যাকহোল শুধু বিভিন্ন মাইক্রোপার্টিকল বা ক্ষুদ্র পদার্থকেই ধারণ করতে পারে না বরং গ্রহ ও এগুলোর প্রাণীসহ ধারণ করতে পারে। বিজ্ঞানীরা এও বলছেন, ব্ল্যাকহোলের ভেতর ধারণ করা সব কিছু পরিভ্রমণ করতে পারে এদের স্খিতিশীল কক্ষপথে।
আমাদের বেশির ভাগ সাধারণ ধারণা মতে, ব্ল্যাকহোলের ভেতরে যা কিছুই ঢুকে পড়ে, তা ব্ল্যাকহোল হজম করে ফেলে এবং এগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়। আসলে কি তাই? এই তো কিছু দিন আগ পর্যন্ত সময়েও ব্ল্যাকহোলের ভেতরের গভীরাংশে কী হচ্ছে, সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট কোনো ধারণা ছিল না। পদার্থবিজ্ঞানী ভিয়াচেসলেভ ডকুচায়েভ হিসাব-নিকাশ করে দেখিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট শর্তাধীনে চার্জযুক্ত ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাকহোলের মতো একটি বস্তুর থাকতে পারে খুবই জটিল অভ্যন্তরীণ কাঠামো। আর এ কাঠামোর ভেতর ফোটন ও প্রোটন উভয়ের মতো ছোট কণা এবং সেই সাথে পুরো আণুবীক্ষণিক বস্তুসহ গ্রহগুলোও ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রের সিঙ্গুলারিটির চার পাশে ঘুরতে পারে। সিঙ্গুলারিটি হচ্ছে ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রীয় অঞ্চল। সেই পয়েন্টই সিঙ্গুলারিটি, যেখানে টাইম ও স্পেস অসীম বা ইনফাইনিট হয়ে ওঠে। ‘পার্টিকলে’ এটি দেখতে কেমন দেখায়? যদি কোনো কন্ডিশনাল অবজারভার ব্ল্যাকহোলের আকর্ষণ এলাকায় চলে যায়, তখন তা অতিক্রম করে ইভেন্ট হরাইজন। জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানীরা মহাকাশে একটি দিগন্তরেখা কল্পনা করেছেন। সে রেখা পার হলে আপনি ব্ল্যাকহোলের প্রভাব বলয়ে চলে যাবেন, সেখান থেকে আর ফিরতে পারবেন না। আপনার জন্য চিরদিনের জন্য বìধ হয়ে যাবে মহাশূন্যে কিংবা পৃথিবীতে ফিরে আসা। আপনি সোজা চলে যাবেন ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রের সিঙ্গুলারিটির কাছে। আপনি এ হরাইজনকে ভাবতে পারেন এমন এক জায়গা, যেখানে এসকেপ ভেলোসিটি আলোর গতিবেগের সমান। এ হরাইজনের বাইরে এসকেপ ভেলোসিটির মান আলোর গতিবেগের চেয়ে কম। অতএব আপনার রকেটের পর্যাপ্ত গতি থাকলে সেখান থেকে বেরিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবেন। কিন্তু রকেট যদি ভুল করে কোনোক্রমে এই হরাইজনের ভেতরে চলে যায়, তবে রকেটের গতি যত বেশিই হোক না কেনো ব্ল্যাকহোলের বাইরে আসার কোনো উপায় অবশেষ থাকবে না।
এই ইভেন্ট হরাইজনের রয়েছে বেশ অবাক করা মজার গুণাবলি। ধরুন একজন পর্যবেক্ষক ব্ল্যাকহোল থেকে অনেক দূরে কোথাও আছেন। তার কাছে এ হরাইজন মনে হবে খুবই সুন্দর, স্খির, নিশ্চল এক গোলীয় উপরিতল। কিন্তু সে যদি হরাইজনের আরো কাছে চলে যায়, তখন সে দেখতে পাবে এটি বেশ বড় গতি নিয়ে এ হরাইজন ছুটে চলেছে। আসলে এটি বাইরের দিকে ছুটে চলেছে আলোর গতিবেগে। এ থেকেও একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কেনো এ হরাইজন অতিক্রম করে ভেতরের দিকে যাওয়া সহজ, কিন্তু এ থেকে বেরিয়ে আসা সহজ তো নয়ই, এমন কি একেবারে অসম্ভব। যেহেতু এ হরাইজন বাইরের দিকে আলোর গতিবেগ নিয়ে ছুটে আসছে, সেহেতু এর বাইরে আসতে হলে আপনাকে ছুটতে হবে আলোর গতিবেগের চেয়ে বেশি গতি নিয়ে। আর আলোর গতির চেয়ে বেশি গতিতে ছোটা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। সে জন্য ব্ল্যাকহোল থেকে বেরিয়েও আসতে পারবেন না।
এ দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, যে পর্যবেক্ষক ব্ল্যাকহোলের ভেতরে চলে গেছেন, আলো অবাধে তার কাছে আসতেও পারে, আবার তার কাছ থেকে দূরেও চলে যেতে পারে। তা সত্ত্বেও কোনো বস্তু ইভেন্ট হরাইজন পার হওয়ার পর তা কখনো এর সীমার বাইরে যেতে পারবে না, যদি একটি বস্তু হরাইজনের নিচে থাকে, তবে তা শুধু ব্ল্যাকহোলের ভেতরের দিকেই যেতে পারবে। ফিরে আসতে পারবে না বাইরের মহাকাশে। তাত্ত্বিকভাবে ইভেন্ট হরাইজন অতিক্রম করার সময় কন্ডিশনাল অবজারভার বা পর্যবেক্ষক কিছু সময়ের জন্য অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে। কিন্তু এরপর চলে যায় খুবই অবাক করা এক জায়গায়, যেখানে স্পেসের র‌্যাডিয়েল ডাইমেনশন সময়ের গুণাবলি ধারণ করে। এটি সম্ভব যে, অবজারভার চলে যেতে পারে স্খিতিশীল কক্ষপথে। অবশ্য স্বাভাবিক ধারণায় এটি কক্ষপথ বা অরবিট নয়। তবে পুরোটা না হলেও প্রচলিত গ্রহগুলোর কক্ষপথের সাথে এর সামান্য মিল আছে। তা সত্ত্বেও গবেষকেরা এর আগেও সুপারমেসিভ ব্ল্যাকহোলের ক্ষেত্রে এ ধরনের কক্ষপথের অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তা ছাড়া গবেষকেরা বলেছিলেন, ইভেন্ট হরাইজনের বাইরে রয়েছে আরেকটি অভ্যন্তরীণ ধথৎধভী ভসড়ম্সষ, যে হরাইজন ছাড়িয়ে গেলে ‘টাইম’ ও ‘স্পেস’ আবার স্বাভাবিক গুণাবলি ধারণ করে। তবে এ ফেনোমেনন বা প্রপঞ্চ এখনো বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়নি।
ডকুচায়েভের মতে, এ ধরনের অরবিট একটি ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাকহোলের ইকুইটরিয়েল প্লেইনের বাইরে অবস্খান করে। এর ফলে এর অপরিসীম অভিকর্ষ এর সীমার মধ্যের বস্তুতে ততটা প্রভাব ফেলে না। বস্তুগুলো সেখানে চলে সিঙ্গুলারিটির চারপাশে। ঠিক যেমনটি গ্রহগুলো চলে কেন্দ্রীয় তারা, অর্থাৎ সূর্যের চার পাশে। তবে, গ্রহগুলোর সাধারণ কক্ষপথ বা অরবিটের মতো এগুলো বৃত্তাকার নয়, বরং এগুলোর আকার আরো জটিল। অনেকটা কুণ্ডলি পাকানো ফুলের মালার মতো। যে গ্রহ এ ধরনের অরবিটের চার পাশে ঘোরে, তার শক্তি গ্রহণ করে সিঙ্গুলারিটি ও অরবিটে আটকা পড়া ফোটন থেকে।
এখানেই শেষ নয়, ডকুচায়েভের মতে, নীতিগতভাবে এসব গ্রহের ওপর নানা জটিল রাসায়নিক পদার্থ গঠিত হতে পারে এবং এগুলোর মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়াও ঘটতে পারে। অতএব, সেখানে তৈরি হতে পারে প্রাণী বেঁচে থাকার মতো উপযুক্ত পরিবেশ। এ বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, ব্ল্যাকহোলের ভেতর হয়তো বা আধুনিক অগ্রসর সভ্যতার সìধান মিলতে পারে। আর এ সভ্যতা এই হোলকে ব্যবহার করতে পারে একটি আদর্শ শেল্টার বা আশ্রয়স্খল হিসেবে। ভিয়াচেসলেভ ডকুচায়েভ বলেন, অগ্রসর পর্যায়ের সভ্যতা সক্রিয় গ্যালাকটিক সেন্টারের ব্ল্যাকহোলের পেটের ভেতর নিরাপদ আশ্রয় পেতে পারে। আর এ সভ্যতা বাহ্যিক অবজারভারের কাছে থাকতে পারে অদৃশ্য। তিনি আরো বলেন, তা সত্ত্বেও এ পরিস্খিতিতে আরামদায়ক অস্তিত্ব নিশ্চিত করার জন্য এ সভ্যতার প্রতিনিধিদের শিখতে হবে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে লড়তে। সেই সাথে শিখতে হবে স্পেস-টাইম বিকৃতির ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা করে অস্তিত্ব বজায় রাখতে।
বড় কথা হচ্ছে, ডকুচায়েভের হাইপোথেসিস পরীক্ষা করা মুশকিল। এমনকি যদি ব্ল্যাকহোলের ভেতর কোনো গ্রহ থেকেও থাকে, আর সেসব গ্রহে থাকে কোনো সভ্যতা, ইভেন্ট হরাইজনের কারণে আমরা কোনো দিন তা দেখতে যেতে পারব না। চিরদিনের জন্য তা আমাদের দৃষ্টির বাইরেই থেকে যাবে। এ হাইপোথেসিস প্রমাণ শুধু তখনই সম্ভব, যখন নীতিগতভাবে প্রমাণ করা সম্ভব হবে, ব্ল্যাকহোল নামের কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই।

No comments:

Post a Comment

ওয়ানপ্লাসের নতুন অক্সিজেন ওএস ১৫ আসছে AI নিয়ে

  অ্যান্ড্রয়েড ১৫  এর ওপর ভিত্তি করে আসছে  ওয়ানপ্লাসের  অক্সিজেন    ওএস  ১৫। অক্টোবরের ২৪ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত ৯:৩০ এ আনুষ্ঠানিকভাবে অপ...