সবচেয়ে বড় কাহিনী, যা এখনো বলা হয় নি…
আসলে আধ্যাত্মিকতা হলো নির্দিষ্ট ধরণের এমন একটা বিষয়, যার মূল কাজকারবার হচ্ছে ‘ধারণা করতে পারা, অনুমান করতে পারা’র সঙ্গে। ঈশ্বরবিশ্বাসী ঐতিহ্যে একটা ধারণা আছে যে, .. .. .. । এখানে কিছু কিছু কাজকে বিবেচনা করা হয়, ঈশ্বরিক নিয়মনীতি না মানা হিসেবে। আবার কিছু কিছু কাজকে সন্তোষজনক বলে গণ্য করা হয়, ঈশ্বরিক কোনো কিছুর কাছে। কিন’ ঈশ্বরে বিশ্বাসী না, এমন ঐতিহ্যর ধারণায়, এটা খুবই সোজাসাপ্টা/সরলসোজা ব্যাপার যে, ঐতিহাসিক পরিসি’তি আসলে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। আসল গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটা হলো ‘এখানে-এখন’। এখন মানে কিন্তু এখনই। কোন একটা কাজ করতে গিয়ে আমরা আগে দেখার চেষ্টা করি আমাদের কাছে এই মুহূর্তে কী কী পথ খোলা আছে। আমাদের এরকম ভাবার কোনই সুযোগ নাই যে, অতীতের কোন একটা সময় যদি এখন আবার পেতাম! এটা এখন। এই মুহূর্তটাই। কোন রহস্য না, খুব সোজা-সরাসরি শুধু এই ‘এখন’।
আর এই ‘এখন’ কেন্দ্রিক ভাবনা থেকেই একটা বোধশক্তির জন্ম নেয় যে, আমাদের সবসময়ই বাস্তবের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। একের পর এক। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। সবসময়। আর এর ফলে আমরা আসলে সবসময়ই আমাদের কাজের যথার্থতা যাচাই করতে পারছি। কিন’ আমরা ক্রমশই এই ‘এখন’টার কাছ থেকে অনেক হুমকি-ধামকি পাচ্ছি। যে কারণে আমরা দৃষ্টি ফেরাই অন্যদিকে। লাফ দেই অতীত বা ভবিষ্যতে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের (যে স্বাচ্ছন্দপূর্ণ জীবন আমরা যাপন করি) বস্তুগত উপাদানগুলোর দিকে নজর দিলে দেখা যায় যে, সবসময়ই এই ধরণের বিষয়গুলোর মধ্যে থেকেই আমাদের কোন একটা পথ বেছে নিতে হয়। তবে কোনটাই কিন’ এককথায় ভালো বা খারাপ বলে গণ্য করা হয় না। .. .. ..। তারা কখনোই গায়ে এই তকমা সেঁটে আসে না যে, ‘এটা খারাপ’ বা ‘এটা ভালো’। আমরা অহরহই এধরণের পরিস্থি’তির মুখোমুখি হই। কিস্তু আমরা আসলে খুব ভালোভাবে এটার প্রতি মনোযোগ দেই না। এটা নিয়ে ভালোভাবে ভাবি না। এটা মাথায় আনি না যে, আমরা কোন এক জায়গায় যাচ্ছি…। … … …। অপেক্ষা করতে থাকি মৃত্যুর জন্য… মৃত্যুর জন্য… মৃত্যুর জন্য।
এটা একটা সমস্যা। ঐ এখন কেন্দ্রিক ভাবনায় পুরোপুরি আস’া না থাকার ফলে আমরা যেসব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে সামনে এগিয়েছি, তাতে ঐ ‘এখন’ এত এত শক্তিশালী জিনিসের অধিকারী হয়েছে যে, আমরা তার সামনা সামনি দাঁড়াতে পারি না। যে কারণে আমাদের সবসময়ই অতীত থেকে ধার করতে হয় আর ভবিষ্যতকে আহ্বান জানাতে হয়। আর হয়তো এ কারণেই আমাদের দরকার হয় ধর্মের। হয়তো এ কারণেই আমরা রাজপথে মিছিল করি। হয়তো একারণেই আমরা মুণ্ডুপাত করি এই সমাজটার। হয়তো একারণেই আমরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট দেই। কিন্তু এটা খুবই বিদ্রুপাত্মক। শেষপর্যন্ত খুব হাস্যকরও বটে…।
দুনিয়া সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া কী, আমরা কোথায় থেকে এসেছি, কী ভাবছি, কী করছি- এগুলো নিয়ে আমরা যতো বেশি অনুসন্ধান করা শুরু করব, তত আমরা দেখতে পাব যে, আমাদেরকে এতদিন অনেক মিথ্যা কথা বলা হয়েছে। সব সামাজিক প্রতিষ্ঠানই আমাদের কাছে মিথ্যা বলেছে। আর এক মিনিট ভালো করে ভাবলে দেখা যাবে এগুলোর মধ্যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময়ই আমাদের কাছে প্রশ্নাতীত অবস্থায় থেকেছে। কিন্তু বর্তমান দুনিয়ার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই এই ধাপ্পাবাজির ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই সেই ধরণের কিছু লোকেরই তৈরি করা জিনিস, যারা সরকার বানায়, দুর্নীতিপরায়ন শিক্ষাব্যবস্থার রুপরেখা বানায়। কারণ আমাদের শাসকদের বিন্দুমাত্র মাথা ব্যাথা নেই আমাদের বা আমাদের পরিবারকে নিয়ে। তারা সবসময় একটা জিনিস নিয়েই চিনি-ত থাকে। আর সেটা হলো কিভাবে এই গোটা দুনিয়াটার উপর একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করা যায়। আমাদেরকে আসলে সত্য থেকে অনেক দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। দুনিয়ায় ঐশ্বরিক উপসি’তি বিষয়ে অনেক বিভ্রান- করা হয়েছে। আমি জানি না ঈশ্বর কে বা কী। কিন্তু আমি জানি তিনি কী নন। আর পুরো সত্যটা জানার জন্য নিজেদের পুরোপুরি প্রস্তুত করতে না পারলে, আমরা হয়তো কোন এক সময় টের পাব যে, আমরা আসলে সত্যিকারের ঐশ্বরিক উপস্থিতির ধারণাটাই তালগোল পাকিয়ে ফেলেছি। আমরা যতো বেশি করে নিজেদের সম্পর্কে জানতে-বুঝতে শুরু করব, ততো বেশি করে মিথ্যায় ভরা দুনিয়াটা আমাদের সামনে স্পষ্ট হতে থাকবে। কিন’ তার আগে আমাদের সত্যটা জানতে হবে। জানার চেষ্টা করতে হবে। আর সত্যটাই আমাদের মুক্তি দেবে।
“তারা খুবই বিপদে পড়িবে… যারা সত্যকে একটা কর্তৃত্ব হিসেবে ধরার চেয়ে, কর্তৃত্বকেই সত্য হিসেবে ধরে নিয়েছেন।”- G. Massey, Egyptologist
একটু ভেবে দেখুন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষকে বিশ্বাসই করিয়ে ফেলেছে যে, আকাশের উপর একজন মহাক্ষমতাধর, সর্বশক্তিমান অদৃশ্য কেউ আছেন। যিনি আপনার প্রতিটা পদক্ষেপের উপর দৃষ্টি রাখছেন। প্রতিদিনের প্রতিটি মুহূর্ত। আর এই অদৃশ্য মহাশক্তির আছে কিছু বিশেষ নিয়মনীতির তালিকা। কী করা যাবে আর কী করা যাবে না। আর কেউ যদি ‘করা যাবে না’ তালিকার কোন কাজ করেই ফেলে তাহলে তার জন্য বরাদ্দ হবে বিশেষ জায়গা। যেখানে তিনি তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে, নানাবিধ তরিকায় নির্যাতন করে, নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে শাসি-র ব্যবস’া করবেন। আর তারা সেখানে পুড়বে, যন্ত্রণা পাবে, কাঁদবে, চিৎকার করবে, তড়পাবে…. দুনিয়ার শেষ দিন পর্যন-…। কিন’… তিনি আপনাকে ‘ভালোবাসেন’! তিনি আপনাকে ভালোবাসেন আর তাঁর দরকার অনেক অনেক পয়সাকড়ি! সবসময়ই তার দরকার প্রচুর পয়সাকড়ি! সর্বক্ষমতাধর, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ ঈশ্বর এই এক পয়সাকড়ির জায়গাতেই কুপোকাত? ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিশাল বিশাল অঙ্কের টাকা লেনদেন করে। তাদেরকে কোন ট্যাক্সও দিতে হয় না। আর সবসময়ই তার চাই আরো কিছু বেশি। হয়তো বলবেন, ভালোই একটা গল্প ফেঁদেছি। হায় ঈশ্বর!
No comments:
Post a Comment