Thursday, October 6, 2011

স্টিভ জবস্ আর নেই..... বিদায় বন্ধু..........


আপডেট আসছে.......
অ্যপলে'র সহ প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস্ আর নেই........ মাত্র ৫৬ বছর বয়সে (১৯৫৫-২০১১) জটিল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। অ্যাপল সূত্র, বিবিসি সিএনএন নিশ্চিত করেছে.....

মাউস নিয়ন্ত্রিত আইকন ভিত্তিক ব্যক্তিগত কম্পিউটার, আইপ্যাড এবং আইফোন উদ্ভাবনার মাধ্যমে স্টিভ জবস বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। ২০০৪ সাল থেকে অগ্ন্যাশয়ের জটিল ক্যান্সারে ভুগছিলেন স্টিভ জবস।

ছবিতে স্টিভ জবস'র জীবনগাঁথা : ।। বিবিসি ।। সিএনএন ।।

২০০৫ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন বক্তা হিসেবে তাঁর অসাধারণ বক্তৃতাটি এখানে : ইউটিউব ভিডিও ।। মূল ইংরেজী বক্তৃতা ।। বাংলা অনুবাদ ।।

স্টিভ জবস ছিলেন মাইক্রোসফটের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং বিল গেটসের প্রাণপ্রিয় বন্ধু। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ ছাড়াও বিশ্বপ্রযুক্তি অঙ্গনের শীর্ষ ব্যক্তিরা স্টিভ জবসের মৃত্যুতে গভীর প্রকাশ করেছেন|

বন্ধুর অকাল প্রয়াণের শোকবার্তায় বিল গেটস বলেন, হৃদয়ের গভীর থেকেই স্টিভকে মিস করছি। আমি সৌভাগ্যবান বলেই স্টিভের মতো এমন বহুগুণী এবং ভবিষৎদ্রষ্টার সঙ্গে কাজ করার সুয়োগ পেয়েছি। পুরো আট বছর একান্তেই জটিল ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন স্টিভ। কিন্তু তাঁর উদ্ভাবনী শক্তিকে মোটেও দমিয়ে রাখতে পারেনি ক্যান্সার। অদম্য সাহস আর ধৈর্য্য নিয়ে তিনি গত আটটি বছর অ্যাপলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। বিশ্বকে দিয়েছেন একের পর চমক। বিশ্ব পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে তাঁকে এ কালের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি উপাধীও দেওয়া হয়। এরই মধ্যে পুরো বিশ্বপ্রযুক্তি অঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। কেউই যেন স্টিভের এ অকালে চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারছেন না।

ফেসবুক সিইও মার্ক জুকারবার্গ তার ফেবু স্ট্যাটাসে লিখেছেন : Steve, thank you for being a mentor and a friend. Thanks for showing that what you build can change the world. I will miss you.


বিশ্বের কোটি কোটি অ্যাপল ভক্তকে চোখের জলে ভাসিয়ে স্টিভ এখন স্মৃতির মনিকোঠায়। স্টিভ শুধু অ্যাপলের সম্পদ ছিলেন না। বরং পুরো বিশ্বই আজ (৬ অক্টোবর) হারালো বিশ্বপ্রযুাক্তির এক অপূরণীয় মহানায়ককে। মৃত্যুকালে স্টিভ স্ত্রী, এক ছেলে এবং দুই কন্যা রেখে গেছেন।


এক নজরে স্টিভ জবস :
১৯৫৫: স্টিভ জবসের জন্ম ২৪ ফেব্রুয়ারি, সানফ্রান্সিসকো। ক্যালিফোর্নিয়ার মাউনটেন ভিউ অঞ্চলে পল ও ক্লারা জবস শিশু স্টিভকে দত্তক নেন।

১৯৭৪: ভিডিওগেম কোম্পানি অ্যাটারি ইনকর্পোরেশনে চাকরি নেন। তবে কয়েক মাস পর ইস্তফা দিয়ে ভারতে বেড়াতে যান।

১৯৭৫: বন্ধু স্টিভ ওজনিয়াকের সঙ্গে স্টিভ জবস নিজেদের পারিবারিক গ্যারেজে আদি কম্পিউটারটি তৈরি করেন।

১৯৭৬: নিজেদের মেশিনপত্র বিক্রির জন্য জবস ও ওজনিয়াক অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। এবারই প্রথম অ্যাপল-১ কম্পিউটারটি পরিচিতি পায়।

১৯৭৭: অ্যাপল-২ বাজারে আসে। এই প্রথম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে কম্পিউটারটি বিক্রি হয়। টানা ১৬ বছর এটি উৎপাদনে থাকে।

১৯৮০: অ্যাপল-৩ বাজারে আসলেও তা বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হয়। কম্পিউটারটির নির্মাণে ত্রুটি ছিল। এটিকেই বলা হয় অ্যাপলের দ্বিতীয় কম্পিউটার।

১৯৮৩: লিসা নামের পারসোনাল কম্পিউটার (পিসি) বাজারে ছাড়ে অ্যাপল। মাউস দিয়ে এটি চালানো সম্ভব হয়। তবে এ প্রচেষ্টাও বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হয়।

১৯৮৪: ম্যাকিনটশ কম্পিউটার বাজারে ছাড়ে অ্যাপল। এটি ব্যাপক মনোযোগ কাড়ে। তবে বিক্রিবাট্টা কম হয়।

১৯৮৫: অ্যাপল ছয়টি কারখানার তিনটিই বন্ধ করে এবং ১২০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করে। বোর্ডরুম বৈঠকে জন স্কালির কাছে হেরে কোম্পানি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন স্টিভ জবস

১৯৮৬: লুকাসফিল্ম লিমিটেডের গ্রাফিকস বিভাগ কিনে নেন জবস। প্রতিষ্ঠানটির মালিক স্টার ওয়ারস চলচ্চিত্রের পরিচালক জর্জ লুকাস। এখানে পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওস নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৮৭: ম্যাকিনটশ-২ বাজারে আসে।

১৯৮৮: নেক্সট কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন জবস। আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেনি। মাত্র ৫০ হাজার কম্পিউটার বিক্রি হয়।

১৯৯৫: পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওসের প্রধান নির্বাহী থাকাকালীন টয় স্টোরি বের হয়। কম্পিউটারে অ্যানিমেশন করা পূর্ণদৈর্ঘ্যরে ছবি। চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাড়া পায়।

১৯৯৬: অ্যাপলের কাছে ৪২ কোটি নয় লাখ মার্কিন ডলারে বিক্রি হয় নেক্সট। জবসের প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন শুরু করে। এতে সফটওয়্যারও নিজেদের নির্মিত।

১৯৯৭: জবস অ্যাপলের অন্তর্বর্তী প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পান।

১৯৯৮: স্বয়ংসম্পূর্ণ কম্পিউটার আইম্যাক বাজারে ছাড়া হয়। এর সঙ্গে মনিটরও জুড়ে দেওয়া হয়। এর ফলে অ্যাপলের প্রতিদ্বন্দ্বীরা অনেক পেছনে পড়ে যায়।

২০০১: অক্টোবরে প্রথমবারের মতো আইপড বাজারে ছাড়া হয়। এতে সাফল্য আসে।

২০০৩: এপ্রিলে আইটিউনস গানের ডিভাইস বাজারে ছাড়া হয়।

২০০৭: প্রথমবারের মতো আইফোন বাজারে ছাড়া হয়। অ্যাপলের নামে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন স্টিভ জবস।

২০১০: এপ্রিল আইপ্যাড বাজারে ছাড়া হয় এবং ৮০ দিনের মধ্যে এটি ৩০ লাখ কপি বিক্রি হয়। বছর শেষে দেড় কোটি আইপ্যাড বিক্রির খবর পাওয়া যায়। অ্যাপলের বাৎসরিক আয় ছয় হাজার ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছায়। ২০০০ সালে এ আয় ছিল ৮০০ কোটি ডলার।

২০১১: বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় অ্যাপল নতুন পণ্য ছাড়ে। এর মধ্যে আছে, আইপ্যাড২, আইফোন৪ এবং সর্বশেষ আইফোন৪এস।



বিশ্ব পরিবর্তনের রূপকার, এ কালের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি :
এমন অনেক মানুষের কাহিনীই আমরা জানি, যারা তাদের জীবনের নানা প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে উঠে এসেছেন সাফল্যের শীর্ষে। কিন্তু অ্যাপেল কম্পিউটরসের এর সিইও স্টিভ জবস এদের সবার থেকে একটু আলাদা। প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে নয়, তিনি সাফল্য আর খ্যাতির চূড়ায় উঠেছেন তার প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গে নিয়েই। তার একক প্রচেষ্টায় নিছক খালি ভাঁড়ার নিয়ে শুরু হওয়া 'অ্যাপেল কম্পিউটারস' আজ মাইক্রোসফট-এর মতো কোম্পানিকে পেছনে ফেলে বিশ্বের এক নম্বর জায়গা দখল করে নিয়েছে। জীবনে বহু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন জবস। কিন্তু তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। সমস্যা যত বড়ই হোক নিজেকে বুঝিয়েছেন, 'আমি হারব না'। সত্যি তিনি হারেননি। কখনো হারেননি। ২০০৪ সালে তার লিভারে এক বিশেষ ধরনের টিউমার ধরা পড়ে। এই টিউমার থেকেই ধরা পড়ে ক্যান্সারের সংক্রমণ। ডাক্তাররা জানান, 'টিউমার অপারেশন করলে স্টিভ-এর বাঁচার আশা খুবই ক্ষীণ। আবার অপারেশন না করলেও রয়েছে প্রাণসংশয়।' তখন মুহূর্তের জন্য থেমে গিয়েছিল স্টিভ-এর পৃথিবী। তার নিজের তৈরি করা সাম্রাজ্য একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছিল চোখের সামনে থেকে। শুধু একটাই কথা মনে হচ্ছিল তার, 'তাহলে কি সব শেষ? সারা জীবনের পরিশ্রম, সব মেহনত কি নিমেষে শেষ হয়ে যাবে? 'অ্যাপেল'কে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থানে নিয়ে যাওয়ার যে স্বপ্ন আমি দেখেছি তা কি তাহলে আর কোনোদিন সম্পন্ন হবে না?' তাকে ঘিরে থাকা মানুষের সবাই যখন ভেঙে পড়েছেন, হারিয়ে ফেলেছেন লড়াই করার ক্ষমতা তখনই স্টিভ উঠে দাঁড়ান। সিদ্ধান্ত নেন, হেরে যাওয়ার আগে শেষ একবার অস্ত্র হাতে তুলে নেবেন। লড়ে নেবেন শেষ লড়াইটা। হার বা জিত যা হওয়ার হবে। তবে এটা ছিল স্টিভ-এর জীবনযুদ্ধের ইতিহাসের একটা অধ্যায়।

সব ডাক্তারই যখন তার বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন, তখন স্টিভ বেছে নেন এক বিকল্প চিকিৎসার পথ। ২০০৪ সালে 'হুইপল প্রোসিডিওর'-এর মাধ্যমে তার টিউমার অপারেশন করেন ডাক্তাররা। কোনো ক্যান্সারনিরোধক প্রয়োগের প্রয়োজনও হয়নি। তবে এতকিছু করেও ক্যান্সারের কামড় আটকানো যায়নি। ততদিনে তার শরীরে থাবা বসিয়ে দিয়েছে ওই মারণ রোগ। এবার একটু একটু করে স্টিভকে ঠেলে নিয়ে যাবে মৃত্যুর দিকে। নিজের জীবনের অন্তিম সত্যিটাকে সঙ্গে নিয়েই স্টিভ এগিয়ে চলা শুরু করেন শীর্ষের পথে। চিকিৎসার জন্য সাময়িক বিরতির পর তিনি ফিরে আসেন অ্যাপেল-এর দুনিয়ায়। নিজের হাতে তুলে নেন সংস্থার দায়িত্বভার। একে একে 'হার্ডল' পেরিয়ে অ্যাপেল এগোতে থাকে সাফল্যের চূড়ায়। প্রথম লড়াই তাকে লড়তে হয়েছিল শৈশবেই। ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৫ সালে সান ফ্র্যান্সিসকো-এ জন্ম হয় স্টিভেন পল জবস-এর। অবিবাহিত বাবা-মায়ের সন্তান স্টিভকে দত্তক নেন পল এবং ক্লারা জবস্। স্টিভ- নামটিও তাদেরই দেওয়া। বাবা-মায়ের অভাবে বেড়ে ওঠাই ছিল স্টিভ-এর প্রথম লড়াই। ক্যালিফোর্নিয়ার হোমস্টেড হাই স্কুল-এ লড়াইয়ের শুরু। ক্যালিফোর্নিয়ার হোমস্টেড হাইস্কুল-এ পড়ার সময় স্টিভ একটি সফ্টওয়্যার সংস্থা হিউলেট-প্যাকার্ড কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ পান। সেখানেই হয় তার কর্মজীবনের সূত্রপাত। এরপর 'আতারি' নামে একটি সংস্থার হয়ে তিনি ভিডিও গেম তৈরি করেন। তবে এসবই ছিল শুরুর শুরু। ১৯৭৬ সালে স্টিভ তার দুই বন্ধু স্টিফেন ওজনিক, রোনাল্ড ওয়েনকে নিয়ে 'অ্যাপেল কম্পিউটারস্'-এর সূচনা করেন। না ছিল কোনো ফান্ড, না কোনো পরিকাঠামো। শুধু ছিল অসীম ইচ্ছা। সফল হওয়ার ইচ্ছা। আর এটাই এগিয়ে নিয়ে যায় স্টিভ বাহিনীকে। ২৪ জানুয়ারি ১৯৮৪ সালে জবস বাজারে আনেন বিশ্বের সবচেয়ে ছোট কম্পিউটার 'ম্যাকিনটশ'। এর জনপ্রিয়তাই অ্যাপেল-এর বিশ্বাসযোগ্যতাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সব হয়েও কিছুই হলো না। বাড়ানো গেল না অ্যাপেল-এর বাজারদর। বাড়ল না ক্রেতার সংখ্যাও।

অন্যদিকে বিশ্ব-বাজারে ছেয়ে গেল মাইক্রোসফটের নিত্যনতুন পণ্য। বাজার দখলের লড়াইয়ে অ্যাপেলকে পেছনে ফেলে অনেকটাই এগিয়ে যায় মাইক্রোসফট; কিন্তু তখনও হাল ছাড়েননি স্টিভ। চালিয়ে যেতে থাকেন লড়াই। এগিয়ে যেতে থাকেন চূড়ান্ত সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। তবে সাফল্যের রাস্তা একাকী। সেই রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে মানুষ অনেক সময়ই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। স্টিভও হয়েছিলেন। তার মনের মুক্তি তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন বৌদ্ধধর্মের মধ্যে। সেই টানে তিনি ছুটে এসেছিলেন এই ভারতের মাটিতেও। বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন নিজ দেশে। আজীবন নিজের ভাগ্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন স্টিভ। আর তার এই লড়াই গোটা বিশ্বের মানুষকে জোগাচ্ছে বাঁচার ইচ্ছা। স্টিভ আমাদের দেখিয়েছেন, যারা লড়াই করেন তারা কখনো হারেন না। আর এই পৃথিবী শুধু জয়ীদেরই স্যালুট করে।

No comments:

Post a Comment

ওয়ানপ্লাসের নতুন অক্সিজেন ওএস ১৫ আসছে AI নিয়ে

  অ্যান্ড্রয়েড ১৫  এর ওপর ভিত্তি করে আসছে  ওয়ানপ্লাসের  অক্সিজেন    ওএস  ১৫। অক্টোবরের ২৪ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত ৯:৩০ এ আনুষ্ঠানিকভাবে অপ...