আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.)
বড়পীর
আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) ৪৭১ হিজরীর রমজান মাসে ইরাকের জিলান নগরীতে
জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সাইয়েদ আবু সাহেল মুসা জঙ্গী দোস্ত, মাতার
নাম ফাতেমা। আবু মোহাম্মদ তাঁর কুনিয়াত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক তাকে বিভিন্ন
উপাধিতে ভূষিত করেছেন। কেউ তাকে বলেছেন গাউসুল আযম। বাংলাদেশের সকল মুসলমান
তাকে বড়পীর বলে সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন। আরবরা তাকে মহিউদ্দীন খেতাব দান
করে থাকে। বড়পীরের প্রকৃত নাম হলো আবু মুহাম্মদ আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.)।
বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) এলমে তাসাউফের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে
সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি এলমে শরীয়ত, মায়ারেফাত, হাকীকত ও তরিকতের সর্বোচ্চ
জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। সকল যুগের, সকল শতাব্দির অলিরা আব্দুল কাদির
জিলানীকে (রহ.) অলিকুল শিরোমণি হিসাবে স্বীকার করেন এবং শ্রদ্ধা ও ভক্তি
করেন। বাল্যকাল হতেই আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) অত্যন্ত মেধাবী ও
স্মরণশক্তির অধিকারী ছিলেন। এ মহান অলি কুরআন ও হাদিসে পারদর্শী হওয়ার জন্য
৪৮৮ হিজরীতে বাগদাদের নিজামিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখান হতে তিনি
কুরআনের তাফসীরে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। এসময় তাঁর অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ
সৃষ্টি হয়। তিনি মুসলিম জাতির জন্য বেশ কয়েকটি কিতাব রচনা করেন। এ সকল
কিতাবের মধ্যে ‘ফুতহুল গায়েব’ ‘গুনিয়াতুত তালেবিন’ ‘ফতহুর রাব্বানী’
‘কাসিদায়ে গাওসিয়া’ বিখ্যাত। এ সকল সুবিখ্যাত কিতাব মুসলমান জাতির
আগামীদিনের পাথেয় হয়ে থাকবে। বড়পীর তাঁর অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদদের এই বলে
সতর্ক করে দেন, কখনো মিথ্যা বলো না। আল্লাহর সাথে শিরক করো না। আল্লাহর
নামে শপথ/কসম করো না। ঐতিহাসিক ফরিদউদ্দিন সাত্তার (রহ.) তাজকেরাতুল আউলিয়া
গ্রন্থে লিখেন: বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) ইতিহাসে, সাহিত্যে, ভূগোল
ও দর্শনশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) শুধু ধর্মীয়
জ্ঞানে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি সকল বিষয়ে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।
ঐতিহাসিকরা বলে থাকেন, বড়পীরের জীবনে সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো তিনি সমগ্র জীবন
ইসলামী শরীয়তের ভেতর থেকেছেন। রাতভর আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থেকেছেন। বাগদাদ ও
পারস্যের ঐতিহাসিকদের মতে, তিনি সারারাত নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ও
আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থাকতেন। বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) ইসলামী
শিক্ষাকে প্রসারের জন্য মাদ্রাসা স্থাপন করেন। এ মাদ্রাসার নাম
মাদ্রাসা-ই-কাদেরীয়া-ফরিদউদ্দিন সাত্তার।
৬৬২ হিজরী ১১ রবিউস সানিতে ৯১ বছরে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
জ্ঞানতাপস,
বহু ভাষাবিদ, ভাষা বিজ্ঞানী, গবেষক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের চবি্বশ পরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে এক
মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি ছিলেন বাবা-মার পঞ্চম সন্তান। তাঁর
বাবা মফিজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন ইংরেজ আমলে সরকারি জরিপ বিভাগের একজন
কর্মকর্তা। তার মা হরুন্নেছা খাতুনের শিক্ষার প্রতি ছিলো প্রবল আগ্রহ।
একটু
বেশি বয়সেই স্কুলে গিয়েছিলেন তিনি। পড়তে অসম্ভব ভালো লাগতো তাঁর। সে ভালো
লাগা এমনই যে চারপাশের সবকিছুই ভুলে যেতেন তিনি। এমনকি নাওয়া-খাওয়ার কথাও
মনে থাকতো না তাঁর। পড়তে পড়তে কখন যে স্কুলের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে সে খেয়ালও
তাঁর থাকতো না। তিনি কমপক্ষে ২২টি ভাষা জানতেন।
স্কুলজীবন
থেকেই তিনি আরবী-ফার্সী-উর্দুর পাশাপাশি হিন্দি ও উড়িয়া ভাষা পড়তে
শিখেছিলেন। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কলকাতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে অনার্সসহ
বিএ পাস করেন ১৯১০ সালে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক
ভাষাতত্ত্বে এমএ পাস করেন। বিভিন্ন চাকরি শেষে ১৯২১ সালের ২ জুন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক নিযুক্ত হন। তিনি বাংলা,
ইংরেজী, আরবী, জার্মান, ফরাসী, ল্যাটিন, হিব্রু, ফার্সী, উর্দূ, হিন্দীসহ
বেশ কয়েকটি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। এ কারণে তাকে বহু ভাষাবিদ বলা হয়। ১৯২৮
সালে ফ্রান্স থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
আমাদের
এই পুরো উপমহাদেশ যে একসময় বৃটিশদের কাছে পরাধীন ছিলো তাতো আর তোমাদের
নতুন করে জানার কিছু নেই। এই বৃটিশদেরকে দেশ থেকে তাড়ানোর জন্য সেময় যে
আন্দোলন হয়েছিলো তাকেই স্বদেশী আন্দোলন বলা হয়। স্বদেশী আন্দোলনের সময়
চারদিকে যখন বিদেশী পণ্য বর্জনের ডাক শুরু হয়ে গেছে। ঠিক তখন থেকেই ড.
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সাহেবী প্যান্ট-কোর্ট ছেড়ে দিয়ে খদ্দরের কাপড়ের আচকান,
পায়জামা আর পাঞ্জাবী পরা শুরু করে দিলেন। তিনি মনে করতেন, দেশি জিনিষ
ব্যবহার করলে দেশে পয়সাটা থাকে আর বিদেশি জিনিস ব্যবহারে দেশের পয়সাটা
বিদেশে চলে যায়।
ড.
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯১৪ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে
সীতাকুন্ড উচ্চ বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন ওকালতিও
প্র্যাকটিস করেছিলেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে সে
বছরের ২ জুন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগে
প্রভাষক পদে যোগদান করেন। থাকতেন ঢাকার চকবাজারের লাগোয়া বেগমবাজারে।
বেগমবাজারের দক্ষিণ দিকে যে পথ, তার কোণাকুণি জায়গাটায় একটা পাকা দোতলা
বাড়ি, বাড়ির নাম 'পেয়ারা ভবন'। ১৯৪৪ সালের ৩০ জুন তিনি ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি
বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন।
১৯৪৮
সালে ঢাকার কার্জন হলে অনুষ্ঠিত পূর্ববঙ্গ সম্মেলনে তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের
নাম 'বাংলা একাডেমী' রাখার প্রস্তাব করেছিলেন, তাইই আজকে আমাদের 'বাংলা
একাডেমী'।
১৯৬০
সালে পূর্ব পাকিস্তানি ভাষার আদর্শ অভিধান প্রকল্পের সম্পাদক হিসেবে
যোগদান করেন বাংলা একাডেমীতে। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ_ কানপার গতি ও দোহা,
বাংলা সাহিত্যের কথা, বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত, ভাষা ও সাহিত্য, বাংলা
ব্যাকরণ, মহররম শরীফ, ইসলাম প্রসঙ্গ, কুরআন প্রসঙ্গ প্রভৃতি। তিনি বহু
গবেষণামূলক প্রবন্ধ, অনুবাদ গ্রন্থ রচনা করেন। 'আঞ্চলিক ভাষার অভিধান'
সম্পাদনা তার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই দেশের
রাষ্ট্রভাষা উর্দু না বাংলা- এ বিতর্কে তিনি বাংলার পক্ষে জোরালো বক্তব্য
উপস্থাপন করেন। তার এ ভূমিকা পূর্ব বাংলার রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ
প্রশস্ত করে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্রজনতার মাঝে সশরীরে উপস্থিত
থেকে সবাইকে উদ্বুদ্ধও করেছিলেন তিনি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে পুলিশের
হামলায় টিয়ার গ্যাসেও আহত হয়েছিলেন।
আজীবন
উদ্যমী এই মানুষটি সর্বদা ছিলেন কর্মচঞ্চল। যখন বুড়ো হয়ে হাসপাতালে ভর্তি
হয়েছেন, তখন ডান হাতের লেখার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। খুব দুঃখিত হয়ে
বলেছেন, ‘ভালো হয়ে নিই, বাম হাতে লেখার অভ্যাস করবো’। ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই
সুদীর্ঘ কর্মজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে তাঁর। ঐতিহাসিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
কার্জন হল সংলগ্ন মূসা খাঁন মসজিদের পশ্চিমপাশে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত
আছেন। ঐ বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ঢাকা হলের নামকরণ করা হয়েছিলো
শহীদুল্লাহ হল।
হজরত ইউসূফ আঃ
অন্যূন সাত বছর জেল খাটার পর বাদশাহর এক স্বপ্নের ব্যাখ্যা দানের পুরস্কার স্বরূপ তাঁর মুক্তি হয়। পরে তিনি বাদশাহর অর্থ ও রাজস্ব মন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং বাদশাহর আনুকূল্যে তিনিই হন সমগ্র মিসরের একচ্ছত্র শাসক। ইতিমধ্যে ক্বিৎফীরের মৃত্যু হলে বাদশাহর উদ্যোগে বিধবা যুলায়খার সাথে তাঁর বিবাহ হয়।বাদশাহর দেখাস্বপ্ন মোতাবেক মিসরে প্রথম সাতবছর ভাল ফসল হয় এবং পরের সাত বছর ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। দুর্ভিক্ষের সময় সুদূর কেন‘আন থেকে তাঁর বিমাতা দশ ভাই তাঁর নিকটে খাদ্য সাহায্য নিতে এলে তিনি তাদের চিনতে পারেন। কিন্তু নিজ পরিচয় গোপন রাখেন।পরে তাঁরসহোদর একমাত্র ছোট ভাই বেনিয়ামীনকে আনা হ’লে তিনি তাদের সামনে নিজের পরিচয় দেনএবং নিজের ব্যবহৃত জামাটি ভাইদের মাধ্যমে পিতার নিকটে পাঠিয়ে দেন।বার্ধক্য তাড়িত অন্ধ পিতা ইয়াকূবের মুখের উপরে উক্ত জামা রেখে দেওয়ার সাথে সাথে তাঁর দু’চোখ খুলে যায়।অতঃপর ইউসুফের আবেদন ক্রমে তিনি সপরিবারে মিসর চলে আসেন।ইউসুফতার ভাইদের ক্ষমা করে দেন।অতঃপর ১১ ভাই ও বাপ-মা তাঁর প্রতি সম্মানের সিজদা করেন। এভাবেই শৈশবে দেখা ইউসুফের স্বপ্ন সার্থক রূপ পায় (অবশ্য ইসলামী শরী‘আতে কারু প্রতি সম্মানের সিজদা নিষিদ্ধ)। সংক্ষেপে এটাই হ’ল ইউসুফ (আঃ) ও ইয়াকূব পরিবারের ফিলিস্তীন হ’তে মিসরে হিজরতের কারণ ও প্রেক্ষাপট, যে বিষয়ে ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করেছিল মূলতঃ তাঁকে ঠকাবার জন্য।সূরাটি মক্কায় নাযিল হওয়ার কারণ :
মক্কায় কোন ইহুদী-নাছারা বাস করত না।ইউসুফ ও ইয়াকূব পরিবারের ঘটনা মক্কায় প্রসিদ্ধ ছিল নাএবং মক্কার কেউ এ বিষয়ে অবগতও ছিল না।তাহ’লে সূরা ইউসুফ কেন মক্কায় নাযিল হ’ল?এর জবাব এই যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আবির্ভাবের সংবাদ মদীনায় পৌঁছে গেলে সেখানকার ইহুদী-নাছারা নেতৃবর্গ তাওরাত-ইনজীলের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী তাঁকে ঠিকই চিনে ফেলে (বাক্বারাহ ২/১৪৬; আন‘আম ৬/২০) ।কিন্তু অহংকার বশে মানতে অস্বীকার করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জাল বুনতে শুরু করে।সে মোতাবেক শেষনবী (ছাঃ) যাতে মদীনায় হিজরত করতে না পারেন এবং মক্কাতেই তাঁকে শেষ করে ফেলা যায়, সেই কপট উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের একদল ধুরন্ধর লোক মক্কায় প্রেরিত হয়।তারা এসে অস্পষ্ট ভঙ্গিতে প্রশ্ন করতে লাগল যে,বলুন কোন নবীর এক পুত্রকে শাম হ’তে মিসরে স্থানান্তরিত করা হয়।কোন্ নবী সন্তানের বিরহ-বেদনায় কেঁদে কেঁদে অন্ধ হয়ে যান ইত্যাদি।
জিজ্ঞাসার জন্য এ ঘটনাটি বাছাই করার অন্যতম কারণ ছিল এই যে, এঘটনাটি মক্কায় ছিল অপরিচিত এবংএকটি সম্পূর্ণ নতুন বিষয়। অতএবমক্কার লোকেরাই যে বিষয়ে জানে না, সে বিষয়ে উম্মী নবী মুহাম্মাদ-এর জানার প্রশ্নই ওঠে না।ফলে নিশ্চয়ই তিনি বলতে পারবেন না এবং অবশ্যই তিনিঅপদস্থ হবেন।তখন মক্কার কাফেরদের কাছে একথা রটিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে যে,মুহাম্মাদ কোন নবী নন, তিনি একজন ভন্ড ও মতলববাজ লোক।বাপ-দাদার ধর্মের বিরোধিতা করার কারণে তখন লোকেরা তাকে হয়তপিটিয়ে মেরে ফেলবে।যাইহোক ইহুদীদের একুটচাল ও কপট উদ্দেশ্য সফল হয়নি।তাদের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে সূরা ইউসুফ নাযিল হয় এবং তাতে ইউসুফ ও ইয়াকূব-পরিবারের ঘটনাবলী এমন নিখুঁতভাবে পরিবেশিত হয়,যা তওরাত ও ইনজীলেওছিল না।বস্ত্ততঃএটি ছিল শেষনবী (ছাঃ)-এর একটি প্রকাশ্য মু‘জেযা।ইউসুফ (আঃ)-এর কাহিনী:
ইউসুফ (আঃ)-এর পিতা ছিলেন ইয়াকূব ইবনে ইসহাক্ব ইবনে ইবরাহীম (আঃ)।তাঁরা সবাই কেন‘আন বা ফিলিস্তীনের হেবরন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।ইয়াকূব (আঃ)-এর দ্বিতীয়া স্ত্রীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন ইউসুফ ও বেনিয়ামীন। শেষোক্ত সন্তান জন্মের পরপরই তার মা মৃত্যুবরণ করেন। পরে ইয়াকূব (আঃ) তাঁরস্ত্রীর অপর এক বোন লায়লা-কে বিবাহ করেন। ইউসুফ-এর সাথে মিসরে পুনর্মিলনের সময় ইনিই মা হিসাবে সেখানে পিতার সাথে উপস্থিত ছিলেন। [6]
হযরত ইয়াকূব (আঃ)মিসরে পুত্র ইউসুফের সাথে ১৭বছর মতান্তরে ২০বছরের অধিককাল অতিবাহিত করেন। অতঃপর ১৪৭ বছর বয়সে সেখানেই ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে অছিয়ত করে যান যেন তাঁকে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের নিকটবর্তী হেবরন মহল্লায় পিতা ইসহাক ও দাদা ইবরাহীম (আঃ)-এর পাশে সমাহিত করা হয় এবং তিনি সেখানেই সমাধিস্থ হন। যাএখন ‘খলীল’ মহল্লা বলে খ্যাত। হযরত ইউসুফ (আঃ) ১১০ বছর বয়সে মিসরে ইন্তেকাল করেন।
চার্লস ডারউইন
বিখ্যাত
জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন ১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের ডাউন
গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন চিকিৎসক। বাবা চেয়েছিলেন পুত্র
চার্লসও বড় হয়ে তার মতো ডাক্তার হোক। তাই ছেলে ডারউইননকে প্রথমে ডাক্তারি
পড়তে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তার মন বসেনি।
তারপর
বাবার ইচ্ছে হলো, ছেলে পাদ্রি হোক। চার্লসকে তিনি ধর্মতত্ত্ব পড়তে
পাঠালেন। তখনকার ঘটনা। চার্লস ডারউইনের যখন ২২ বছর বয়স, তখন তিনি একটি
জাহাজে ঘোরার আমন্ত্রণ পেলেন। ব্রিটিশ সরকার তখন বিগল নামে একটা জাহাজ
পাঠাচ্ছিলো দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল আর প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু দ্বীপ
অনুসন্ধান করার জন্য। সেই জাহাজে বিভিন্ন পেশার মানুষ ছিলেন। ডারউইনকে
নির্বাচন করা হয়েছিলো প্রকৃতি বিজ্ঞানী হিসেবে। কারণ, বরাবরই তার ঝোঁক ছিলো
গাছ-পালা আর কীট-পতঙ্গে।
বন্ধুরাও
ডারউইনের এই আগ্রহের কথা জানতেন। জাহাজে তার মতো একজন অল্পবয়সী নিতান্ত
শৌখিন বিজ্ঞানীকে বেছে নেওয়া হয়েছিল এজন্য যে, জাহাজটা সমুদ্রে ভাসবে পাঁচ
বছর ধরে! কোনো বিজ্ঞানীকেই বেতন দেওয়া হবে না। বিনা বেতনে কে যেতে চায়!
ডারউইন বড়লোক ডাক্তারের ছেলে, তাই তাকেই নির্বাচন করা হয়।
পাঁচ
বছর ধরে বহু দ্বীপ ঘুরে ঘুরে ডারউইন অনেক পশু-পাখি, পোকা-মাকড়, লতাপাতা
সংগ্রহ করে আনেন। তারপর সেগুলো নিয়ে অনেক গবেষণার পর লিখলেন তার বিখ্যাত
বই, 'দ্য অরিজিন অব স্পিসিস বাই মিনস অব ন্যাচারাল সিলেকশন'। বইয়ে লেখা
ডারউইনের মতামত পৃথিবীর শতকরা আশি ভাগ বিজ্ঞানীই মেনে নেন। ডারউইন তার এই
বিখ্যাত বইতে লিখেন, গাছপালা, জীবজগৎ, পশুপাখি এবং মানুষ_ কোনো কিছুই
অতিপ্রাকৃত শক্তির মাধ্যমে সৃষ্ট নয়। মানুষ ও প্রাণিজগৎ বিবর্তনের মধ্য
দিয়েই চলেছে। চার্লস ডারউইন প্রকৃতির অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করেছেন বিবর্তনের
ধারা হিসেবে। তিনি প্রমাণ করেছেন, মানুষ মোটেই জীব জগতের বিশেষ কোনো
সৃষ্টি নয়।
তার তত্ত্বটির সারমর্ম
হলো, এই বিশাল জীব জগতে আমরা স্বতন্ত্র নই। আমরা ভিন্ন কোনো প্রক্রিয়ায়
সৃষ্টি হইনি। কীট-পতঙ্গ, পশুপাখির মতো মানুষও জীব জগতের একটি অংশ মাত্র।
জন্মসূত্রে তাদের আত্মীয়। কেননা, একই পূর্বপুরুষের উত্তরসূরি আজকের
পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সব প্রাণী। 'প্রতিটি জীবই উত্তরাধিকার সূত্রে সেই
সৃষ্টির শুরু থেকে রয়েছে'। _ডারউইনের এই ধারণাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে
পরবর্তীকালে ডিএনএ আবিষ্কৃত হয়। সম্ভবত সকল প্রাণী যারা কখনও-না-কখনও এই
পৃথিবীতে এসেছে, বসবাস করেছে, তাদের মধ্যে প্রথম থেকে বর্তমান পর্যন্ত
কোনো-না-কোনো জীবের বৈশিষ্ট্য উত্তরাধিকার সূত্রে রয়েই গেছে।
ডারউইনের
আর একটা তত্ত্ব হলো 'স্ট্রাগল ফর একজিস্টেন্স' বা 'টিকে থাকার লড়াই'।
পৃথিবীতে যতো মানুষ জন্মায়, ২৫ বছরে সংখ্যা তার দ্বিগুণ হয়ে যায়। কোনো কোনো
প্রাণীর বংশবৃদ্ধি এর চেয়েও অনেক বেশি। এইভাবে বাড়তে থাকলে সবার খাদ্য
জোটানো সম্ভব নয়। পৃথিবীতে পা ফেলারও জায়গা থাকতো না। বন্যা, দুর্ভিক্ষ,
মহামারী, ভূমিকম্প আর যুদ্ধে বহু মানুষ ও প্রাণী অকালে মারা যায়। এর মধ্যে
যারা বাঁচে, তারাই টিকে থাকে। সব প্রাণীর মধ্যে অবিরাম যুদ্ধ চলছে; যারা
জয়ী হয়, তারাই শুধু বেঁচে থাকে।
কিংবদন্তি
এই বিজ্ঞানী পৃথিবীর সব শিশুকে খুব ভালোবাসতেন। ১৮৮২ সালের ১৯ এপ্রিল
না-ফেরার দেশে চলে যাওয়া এই মানুষটিকে তোমরাও নিশ্চয় ভালোবাসো খুব।
স্বামী বিবেকানন্দ
বিবেকানন্দ ধ্যান করার সময় ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই রাত ৯টা ১০ মিনিটে দেহ ত্যাগ করেন
অ্যারিস্টটল
উত্সঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
No comments:
Post a Comment