মাইকেল নস্টারডেমাস
জ্যোতির্বিদ্যার জ্ঞান অর্জনের পর দাদার পরামর্শে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়ালেখার জন্য ভর্তি হন মন্ট পিলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে। চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়ালেখা শেষ করার পর সবার কাছে অতি দ্রুত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। দীর্ঘদিন গবেষণা করার পর আবিষ্কার করেন মহামারী প্লেগরোগের ওষুধ। এ আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি সারা ইউরোপ থেকে প্লেগ মহামারী উচ্ছেদ করেন। তৎকালীন সময়ে তার গবেষণার বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একে একে তিনি আবিষ্কার করেন ভিটামিন সি কমপ্লেক্স, রোজ পিল ইত্যাদি ওষুধ। উক্ত আবিষ্কারসমূহ দুর্ভিক্ষ ও দুর্যোগে জনসাধারণকে ভিটামিনের অভাব পূরণে সহায়তার করে। ১৫৫৫ সালে তিনি আবার জ্যোতির্বিদ্যায় মনোনিবেশ করেন। জ্যোতির্বিদ্যার উপরে 'ফরডিক ফ্রান্স' শিরোনামে বিখ্যাত একটি বই লিখেন। বিখ্যাত এই মনীষী ফ্রান্স রিভ্যুলেশন, নেপোলিয়নের আবির্ভাব, ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধ, সাবমেরিন যুদ্ধ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যা পরিবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ সঠিক হিসাবে পরিগণিত হয়। রাজা জর হেনরির পত্নী ক্যাথলিক টি মেডিসিন তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। যেকোনো কিছু আবিষ্কারের সময় তিনি ডি মেডিসিনের সাহায্য নিতেন। মেডিসিন যে ভবিষ্যতে ফ্রান্সের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হবেন তা তিনি তাকে বলে দিয়েছিলেন। ১৫৬৬ সালে বিশ্ববিখ্যাত এই মহাজ্ঞানী ইহলোক ত্যাগ করেন।
স্টিভ জবস
১৯৫৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। অবিবাহিত মা-বাবার সন্তান স্টিভকে দত্তক নেন পল ও ক্লারা জবস। স্টিভ নামটিও তাঁদের দেওয়া। ক্যালিফোর্নিয়ার হোমস্টেড হাই স্কুলে শুরু হয় শিক্ষাজীবন। স্কুলে পড়া অবস্থায়ই চাকরি নেন হিউলেট-প্যাকার্ড বা এইচপিতে। এরপর 'অ্যাটারি' নামের একটি ভিডিও গেইম তৈরির প্রতিষ্ঠানে কাজ নেন। ১৯৭৬ সালে বন্ধু স্টিভ ওজনেক আর রোনাল্ড ওয়েনকে নিয়ে অ্যাপল কম্পিউটার তৈরির কাজ শুরু করেন। সফল হওয়ার তুমুল ইচ্ছা ছাড়া বেশি কিছু সম্বল ছিল না। এর জোরেই তৈরি করে ফেলেন প্রথম কম্পিউটার 'অ্যাপল-১'। ১৯৮৪ সালের ২৪ জানুয়ারি বাজারে আনেন বিশ্বের সবচেয়ে ছোট কম্পিউটার 'ম্যাকিনটোশ'। বাজার মাতিয়ে দিল নতুন প্রজন্মের এ কম্পিউটার। এরপর একে একে স্টিভ বাজারে এনেছেন আইপড, আইফোন ও আইপ্যাডের মতো পণ্য। অ্যাপল হয়ে উঠল প্রযুক্তিবিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান।
বাবার ওপর খেপে ছিলেন স্টিভ। ভুলতে পারেননি যে বাবা তাঁর দায়িত্ব নেননি। তাই বাবার সামনে যাননি কখনো। একটি ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডকে জবসের বাবা জান্দালি বলেন, 'আমি তার সঙ্গে অনেকবার দেখা করতে চেয়েছি। তাকে ই-মেইল করেছি। কিন্তু সে কখনো ই-মেইলের উত্তর দেয়নি, দেখা করেনি। এ ছাড়া ফোন করা হলে জবস ফোন রেখে দিত।'
জবসের জন্মের কয়েক বছর পর জান্দালি ও জোয়ানে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মোনা সিম্পসন নামে তাঁদের একটি কন্যাসন্তান হয়। কিন্তু স্টিভ জবস তাঁর বোনের ব্যাপারে জানতেন না। ১৯৮৫ সালে মোনা যখন একজন খ্যাতিমান লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তখন বিষয়টি জানেন জবস। এরপর থেকে তাঁরা খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
জবসের বয়স যখন ২৩, তখন তাঁর প্রেমিকা রিশ-অ্যানের গর্ভে সন্তান আসে। কিন্তু জবস এই সন্তানের বাবা হিসেবে নিজেকে অস্বীকার করেন। প্রায় এক বছর পর লিসা নিকোল নামের এই সন্তানকে মেনে নেন তিনি। মেয়ের প্রতি ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ 'লিসা' নামে একটি কম্পিউটারও তৈরি করেন জবস।
জীবনে অনেকেরই প্রেমে পড়েছেন তিনি। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আমেরিকার সংগীতশিল্পী জোয়ান বারেজ, হলিউড অভিনেত্রী ডায়ানে কিটন। জানা যায়, জবস জোয়ান বারেজকে বিয়েও করেছিলেন। ১৯৮৯ সালে স্ট্যানফোর্ডে এক অনুষ্ঠানে লরেন পাওয়েল নামের এক ছাত্রীকে পছন্দ হয় জবসের। ১৯৯১ সালের ১৮ মার্চ তাঁরা বিয়ে করেন। চার সন্তানের বাবা জবস নিয়মিত সন্তানদের ভালো-মন্দ ও লেখাপড়ার খোঁজ নিতেন।
২০০৪ সালে জবসের লিভারে বিশেষ ধরনের টিউমার ধরা পড়ে। এই টিউমার থেকেই অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সারের সংক্রমণ। ডাক্তাররা জানান, 'টিউমার অস্ত্রোপচার করলে তাঁর বাঁচার আশা খুবই ক্ষীণ। আবার অপারেশন না করলেও রয়েছে প্রাণসংশয়। এ খবরে ভেঙে পড়েন অ্যাপলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ পরিস্থিতিতে জবস অপারেশন করানোর সিদ্ধান্ত নেন। অস্ত্রোপচার সফল হয়। এতে জবসের সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ ফিরে পায় পুরো অ্যাপল পরিবার। নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। কিন্তু ক্যান্সারটাই শেষ পর্যন্ত জয়ী হলো। সবশেষ হওয়ার আগে দীর্ঘ আট বছর তিনি জটিল ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করেন। এ সময়কালে তিনি অ্যাপলের সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য আইপড, আইফোন, আইপ্যাড বাজারে ছাড়েন।
জবস কেবল গুরুই নন, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বও বটে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গেও ছিল তাঁর সখ্য। এক শোকবার্তায় গেটস লিখেছেন, 'হৃদয়ের গভীর থেকেই স্টিভের অভাব বোধ করছি। আমি সৌভাগ্যবান বলেই স্টিভের মতো এমন বহু গুণী এবং ভবিষ্যৎ-দ্রষ্টার সঙ্গ পেয়েছি। স্টিভের মৃত্যুর ক্ষতি শুধু এই প্রজন্ম নয়, পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম অনুভব করবে।'
কেবল বিল গেটস নয়, জবসের মৃত্যুতে শোকাহত পুরো প্রযুক্তিবিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ফেইসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক স্পিলবার্গসহ আরো অনেকে জবসের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, এমনকি গুগলের হোমপেইজেও সম্মান জানানো হয়েছে স্টিভ জবসকে।
মৃত্যুর পরপরই সারা পৃথিবীর মানুষের মধ্যে খবরটি বেশ আলোড়ন তোলে, সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে জবসকে নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে কোটি কোটি শোকগাথা। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সিলিকনভ্যালির নেতাদের মনে। তাঁদের একটাই কথা, সিলিকনভ্যালি পাবে না নতুন কোনো স্টিভ জবস। তিনি কেবল একজন উদ্যোক্তাই ছিলেন না, ছিলেন এক আদর্শ মডেল। তিনি দেখিয়েছেন শত সংগ্রাম করে কিভাবে সফলতা পেতে হয়। তিনি কেবল নতুন উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন দেখতেই শেখাননি, কিভাবে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হয় তাও দেখিয়েছেন।
জবসের স্বপ্নের হাত ধরেই হয়তো চলবে আরো কয়েক প্রজন্ম। তবে একজন স্টিভ জবস আর কখনো ফিরে আসবেন না। বদলে দেবেন না প্রযুক্তির ধারণা, প্রযুক্তিপণ্য। তবে তাঁকে ভোলা সহজ হবে না। যিনি পথ দেখান, তিনি সঙ্গেই থাকেন।
সূত্রঃ কালের কন্ঠ, আমার ব্লগ
সালমান রুশদি
ব্রিটিশ-ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও লেখক সালমান রুশদির জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৯ জুন, মুম্বাই শহরে। তাঁর বাবা আনিস আহমেদ রুশদি ছিলেন আইনজীবী ও ব্যবসায়ী। আর মা নেগিন বাট ছিলেন শিক্ষক। রুশদি তাঁদের একমাত্র সন্তান।ছোটবেলায় রুশদি পড়াশোনা করেন মুম্বাইয়ের ক্যাথিড্রাল অ্যান্ড জন ক্যানন স্কুল আর রাগবি স্কুলে। পরে ক্যামব্রিজের কিংস কলেজে ইতিহাস পড়েন। পুরোপুরি লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে তিনি দুটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেন। তাঁর প্রথম বই গ্রিমাস (১৯৭৫) ছিল অংশত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি। পাঠক ও সমালোচকেরা বইটি উপেক্ষা করেন; তবে পরবর্তী উপন্যাস মিডনাইট চিলড্রেন প্রকাশিত হলে তিনি সব মহলের প্রশংসালাভে সক্ষম হন। ১৯৮১ সালে প্রকাশিত ওই বই বুকার পুরস্কার পায়। ১৯৮৮ সালে তাঁর দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশিত হলে মুসলমানদের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। আয়াতুল্লাহ খোমেনি তাঁকে হত্যার ফতোয়া জারি করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য অন্যান্য বই হচ্ছে: শেম (১৯৮৩), দ্য জাগুয়ার স্মাইল: অ্যা নিকারাগুয়ান জার্নি (১৯৮৭), হারুন অ্যান্ড দ্য সি অব স্টোরিজ (১৯৯০), ইমাজিনারি হোমল্যান্ডস (১৯৯২), মুর্স লাস্ট সাই (১৯৯৫), শালিমার দ্য ক্লাউন (২০০৫) এবং লুকা অ্যান্ড দ্য ফায়ার অব লাইফ (২০১০)।
সালমান রুশদির ওপর গুন্টার গ্রাস, মার্কেস, ইটালো কালভিনো, নবোকভ, জেমস জয়েস, বোর্হেস, কাফকা আর মিখাইল বুলগাকভের প্রভাব আছে। তাঁর রচনাকর্মে জাদুবাস্তবতা ও হাস্যরসের প্রবল উপস্থিতি। তিনি উত্তর-উপনিবেশবাদী লেখক।
বুকার ছাড়াও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন রুশদি। ২০০৭ সালের ১৬ জুন ইংল্যান্ডের রানির জন্মদিনে তিনি পান নাইটহুড খেতাব। তাঁর লেখায় অনুপ্রাণিত ও প্রভাবিত হয়েছেন জেডি স্মিথ, হোমি কে ভাবা, তসলিমা নাসরিন আর ক্রিস্টোফার হিটচেনস। মিডনাইট চিলড্রেন উপন্যাস অবলম্বনে দীপা মেহতা তৈরি করছেন তাঁর নতুন চলচ্চিত্র, যেখানে সীমা বিশ্বাস, শাবানা আজমি, নন্দিতা দাস আর ইরফান খান অভিনয় করবেন। লেখক না হলে কী হতেন? এ প্রশ্নের জবাবে রুশদি বলেছেন, অভিনেতা।
ঘটনাবহুল ব্যক্তিগত জীবনের অধিকারী সালমান রুশদি চারবার বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রীরা ছিলেন: ক্লারিসা লুয়ার্ড, ম্যারিয়ান উইগিনস, এলিজাবেথ ওয়েস্ট ও পদ্মালক্ষ্মী। তাঁদের কারও সঙ্গেই এখন আর তাঁর সম্পর্ক নেই।
সালমান রুশদি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির মানবিক বিভাগের অনারারি প্রফেসর ও রয়্যাল সোসাইটি অব লিটারেচারের ফেলো ছিলেন। ২৪টিরও বেশি ভাষায় তাঁর লেখা অনূদিত হয়েছে।
সক্রেটিস
সক্রেটিসের জ্ঞানথিপি ও মায়ার্ত নামে দুই স্ত্রী ছিল। দুই স্ত্রীর গর্ভে তার তিনটি সন্তান জন্মলাভ করেছিল। দারিদ্র্যের মধ্যে হলেও তিনি তাদের ভরণ-পোষণের ও শিক্ষার ব্যাপারে কোনো উদাসীনতা দেখাননি। তিনি বিশ্বাস করতেন শিক্ষাই মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, শিক্ষার মধ্যেই মানুষের অন্তরে জ্ঞানের পূর্ণ জ্যোতি উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। জ্ঞানের মধ্যদিয়েই মানুষ একমাত্র সত্যকে চিনতে পারে। যখন তার কাছে সত্যের স্বরূপ উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে সে আর কোনো পাপ করে না। অজ্ঞানতা থেকেই সব পাপের জন্ম। তিনি চাইতেন মানুষের মনের অজ্ঞানতাকে দূর করে তার মধ্যে বিচার-বুদ্ধিবোধকে জাগ্রত করতে। তিনি যুবকদের সুপথে পরিচালিত হওয়ার শিক্ষা দিতেন। তার বিখ্যাত উক্তি ছিল, Know theyself অর্থাৎ নিজেকে জানো। ডেলফির উপাসনালয়ে একবার জিজ্ঞাসা করা হয় সক্রেটিস অপেক্ষা বিজ্ঞতর কোনো ব্যক্তি আছেন কিনা। এর উত্তর আসে সক্রেটিস অপেক্ষা বিজ্ঞতর কোনো ব্যক্তি নেই। এই দৈববাণীতে তিনি সম্পূর্ণ হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। কারণ তিনি জানতেন, তিনি কিছুই জানেন না। সক্রেটিসের আদর্শকে দেশের বেশকিছু মানুষ সুনজরে দেখেনি। তারা সক্রেটিসের সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে দেশের নাগরিক আদালতে সক্রেটিসের ঘোর বিরোধী অভিযোগ আনয়ন করেন। তার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল তিনি এথেন্সের প্রচলিত দেবতাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করে নতুন দেবতাদের প্রবর্তন করতে চাইছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি দেশের যুব সমাজকে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করেন। তৃতীয়ত, তিনি প্রচলিত গণতন্ত্র ও ত্রিশজন স্বৈরশাসকের বিরোধিতা করেছেন। তাছাড়া আরো যেসব অভিযোগের উপর ভিত্তি করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয় তা হলো : সক্রেটিস অশুভ কাজ করেন, তিনি একজন কৌতূহলী ব্যক্তি, তিনি স্বর্গমর্ত্যের বিদ্যমান বস্তু নিয়েও অনুসন্ধান করেন এবং যা ভালো তাকে খারাপ বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন এবং অন্যকে এসব বিষয় শিক্ষা দেন। যাইহোক_ সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারক তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর তিনি আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে যা বলেছিলেন_ তা অঢ়ড়ষড়মু (এ্যাপোলজি) সংলাপে বর্ণিত আছে। তিনি আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছিলেন_ 'হে আমার দোষ সাব্যস্তকারীগণ, আমি মৃত্যুকালে ব্যাকুল চিত্তে তোমাদের নিকট ভবিষ্যদ্ববাণী করে যাচ্ছি। তোমরা আমাকে সে শাস্তি দিলে_ আমার মৃত্যুর পর তা অপেক্ষা গুরুতর শাস্তি তোমাদের অবশ্যই ভোগ করতে হবে। আমি চলে যাচ্ছি, তোমরা রয়ে যাচ্ছো_ তিনিই ভালো জানেন, কে দোষী আর কে নির্দোষ।'
তারপর সক্রেটিস হেমলেক নামক বিষের পাত্র হাতে তুলে নিয়ে অকম্পিতভাবে শেষবারের মতো ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন এবং সমস্ত বিষ পান করলেন। তার মৃত্যুর পরই এথেন্সের মানুষ ক্ষোভে দুঃখে ফেটে পড়ল। চারদিকে ধিক্কার ধ্বনি উঠল। বিচারকরা একঘরে হয়ে পড়ল। অনেককে জুতা পিটিয়ে মারা হলো, কেউ কেউ আত্মহত্যা করল। সক্রেটিসের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে তার নশ্বর দেহের শেষ হলেও চিন্তার শেষ হয়নি। তার শিষ্য প্লেটো_ প্লোটোর শিষ্য অ্যারিস্টটলের মধ্যদিয়ে সেই চিন্তার এক নতুন জগৎ সৃষ্টি হলো, যা মানুষকে উত্তেজিত করছে আজকের পৃথিবীতে।
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি
তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের বহুমুখী প্রতিভা: ভাস্কর, স্থপতি, উদ্ভাবক, গণিতবিদ, লেখক, সংগীতজ্ঞ, শারীরবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, ভূতাত্ত্বিক, ভ্রূণবিদ, উদ্ভিদবিজ্ঞানী। উড়ন্ত যানের নকশা এঁকেছিলেন, আবিষ্কার করেছিলেন জলগতিবিদ্যার সূত্র, আন্দাজ করেছিলেন টেকটোনিক প্লেটের ধারণা, বের করেছিলেন সৌরশক্তি কেন্দ্রীভূত করার কৌশল, উদ্ভাবন করেছিলেন অভিনব সব সমরাস্ত্র, পর্যবেক্ষণ ও লিপিবদ্ধ করেছিলেন রক্তের সঞ্চালন, দৃষ্টিশক্তির রহস্য ও হাড়ের সংস্থান।
মিকেলেঞ্জেলোর রেনেসাঁর অন্যতম প্রতিক লেওনার্দো দা ভিঞ্চি। তিনি ইতালীয় রেনেসাসেঁর কালজয়ী চিত্রশিল্পী। লেওনার্দো দা ভিঞ্চির সম্পর্কে না জানলে তার মহিমা আন্দাজ করা যাবে না। রেনেসাঁ সাংস্কৃতিক আন্দোলনটি জেগে উঠেছিল চতুর্দশ শতকের ফ্লোরেন্সে; এর পর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইয়োরোপে। এ আন্দোলন ইয়োরোপকে টেনে বের করে আনে এর মধ্যযুগীয় ধর্মতন্ত্রের অন্ধকার থেকে।
লিওনার্দোর জন্ম ফ্লোরেন্সে, ১৪৫২ সালের ১৫ এপ্রিল। মেসের পিয়েরো ফ্রুয়োসিনো দি আন্তোনিয়ো দা ভিঞ্চি নামে আদালতকর্মী বাবা আর কাতেরিনা নামে কিষানি মায়ের তিনি ছিলেন অবৈধ সন্তান। ২৪ বছর বয়সে ফ্লোরেন্সের এক আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে সমকামের অভিযোগ ওঠে। শৈশবের মাত্র দুটি স্মৃতি উদ্ধার করতে পেরেছিলেন লেওনার্দো। একবার তিনি শুয়ে ছিলেন দোলনায়। আকাশ থেকে হঠাৎ একটি চিল নেমে আসে দোলনার ওপর। পাক খেতে খেতে চিলটির লেজের পালক ছুঁয়ে যায় তাঁর মুখ। এই ঘটনাটির মধ্যে তিনি পেয়েছিলেন অমঙ্গলের বার্তা। কিন্তু সমস্ত অমঙ্গল আর দুর্দশা ঝেড়ে ফেলে মানুষটি হয়ে ওঠেন মানবসভ্যতার অন্যতম নির্মাতা।
১৪৬৬ সালে লিওনার্দোর বয়স যখন ১৪, তখন তিনি ভ্যারিচ্চিও (Verrocchio)-র কাছে শিক্ষানবীশ হিসেবে যোগ দেন। ভ্যারিচ্চিও-র পুরো নাম “আন্দ্রে দাই সায়ন”, তিনি ছলেন সে সময়ের একজন সফল চিত্রকর। ভ্যারিচ্চিও-র কর্মস্থলে তত্কালীন গুণী মানুষদের সমাগম হত। আরও নামকরা যেসব শিল্পী ভ্যারিচ্চিও-র তত্ত্বাবধানে কাজ করত বা তার ওয়ার্কশপে যাতায়াত করত, তাদের মধে অন্যতম হলেন গিরল্যান্ডিও (Ghirlandaio), পেরুগন (Perugino), লরেঞ্জা দাই ক্রিডি (Lorenzo di Credi)।
এখানে কাজ করে লিওনার্দো হাতে কলমে প্রচুর কারিগরি জ্ঞানার্জন করেছিলেন। তার সুযোগ হয়েছিল কারুকার্য, রসায়ন, ধাতুবিদ্যা, ধাতু দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানো, প্রাস্টার কাস্টিং, চামড়া দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানো, গতিবিদ্যা এবং কাঠের কাজ ইত্যাদি শেখার। তিনি আরও শিখেছিলেন দৃষ্টিনন্দন নকশাকরা, ছবি আঁকা, ভাস্কর্য তৈরি এবং মডেলিং। ভ্যারিচ্চিও-র ওয়ার্কশপে বেশিরভাগ কাজ করত তার অধঃস্তন কর্মচারীরা। ভাসারীর বর্ননানুসারে লিওনার্দো ভ্যারিচ্চিও কে তার “ব্যাপ্টিজম অব ক্রাইস্ট” ছবিটিতে সাহায্য করেছিলেন। ছবিটিতে দেখানো হয়েছে একটি দেবদূত যীশুর লাঠি ধরে আছে। ছবিটি ভ্যারিচ্চিও কে এতটাই অভিভূত করেছিল যে তিনি নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর কখনো তুলিই ধরবেন না, ছবিও আঁকবেন না। তবে খুব সম্ভবত ভাসারি ঘটনাটি অতিরঞ্জিত করেছিলেন। সূক্ষ্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এ ছবিটির যে সব বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তা হল- এটি বিশেষ পদ্ধতিতে তৈল রং দিয়ে আঁকা। ভ্যারিচ্চিও বেশ কয়েকটি কাজে লিওনার্দো মডেল হিসেবে ছিলেন। যেমন- “ডেভিড” চরিত্রে “দি বার্জেলো”( Bargello) নামক ব্রোঞ্জ মূর্তিতে, “আর্চঅ্যাঞ্জেল মাইকেল” হিসেবে “টোবিস এন্ড অ্যাঞ্জেল“(Tobias and the Angel) এ।
১৪৭২ সালে ২০ বছর বয়সে লিওনার্দো “গির অব সেন্ট লুক” এর পরিচালক হবার য্যোগ্যতা অর্জন করেন। এটি চিকিত্সক এবং চিত্রকরদের একটি সংঘ্য। কিন্তু তার বাবা তাকে নিজেদের ওয়ার্কশপের কাজে লাগিয়ে দেন। ভ্যারিচ্চিওর সাথে চুক্তি অনুসারে তিনি তার সাথেও কাজ চালিয়ে যান। লিওনার্দোর নিজের হাতে তারিখ দেওয়া সবচেয়ে পুরানো ছবি হল আর্নোভ্যালি, তারিখটি হল ৫ই আগস্ট ১৪৭৩।
পেশাগত জীবন(১৪৭৬-১৫১৩)
আদালতের নথি থেকে দেখা যায় একবার লিওনার্দো সহ আরও ৩ জন যুবককে সমকামীতার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং তারা বেকসুর খালাসও পেয়েছিল। এরপর ১৪৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি কি করেছিলেন, কোথায় ছিলেন তার কিছুই জানা যায়নি। ধারনা করা হয় পরবর্তিতে ১৪৭৮ থেকে ১৪৮১ পর্যন্ত লিওনার্দো তার নিজের ওয়ার্কশপে কাজ করেছে। তিনি ১৪৭৮ সালে চ্যাপেল অব সেন্ট বার্নার্ড ও “অ্যাডোরেশন অব দি ম্যাগি” এবং ১৪৮১ সালে "মঙ্ক অব সান ডোনাটো এ স্কাপিটো" আঁকার দায়িত্ব পান।
ভাসারির মতে লিওনার্দো সে সময়ের সেরা সংগীতজ্ঞ ছিলেন। ১৪৮২ সালে তিনি ঘোড়ার মাথার আকৃতির একটি বীণা তৈরি করেছিলেন। লরেঞ্জো দ্য মেডিসি(Lorenzo de’ Medici) লিওনার্দো-র হাতে এই বীনা উপহার স্বরূপ মিলানের ডিউক লুদোভিকো এল মোরো(Ludovico il Moro) এর কাছে পাঠিয়েছিলেন শান্তিচুক্তি নিশ্চিত করার জন্য। এ সময় লিওনার্দো ডিউকের কাছে একটি চিঠি লিখেন, যাতে ছিল তার উদ্ভাবিত বিভন্ন চমকপ্রদ যন্ত্রের বর্ননা। তিনি এ চিঠিতে নিজের চিত্রশিল্পী পরিচয়ের কথাও লিখেছিলেন।
লিওনার্দো ১৪৮২ থেকে ১৪৯৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মিলানে কাজ করেছেন। এখানে তিনি ভার্জিন অব দ্যা রকস্ এবং দ্যা লাস্ট সাপার ছবি দুটি আঁকার দায়িত্ব পান। ১৪৯৩ থেকে ১৪৯৫ এর মধ্যে তার অধিনস্তদের মাঝে ক্যাটরিনা নামে এক মহিলার নাম পাওয়া যায়। ১৪৯৫ সালে এ মহিলাটি মারা যান। সে সময় তার শেষকৃত্যের খরচ দেখে ধারনা করা হয় তিনি ছিলেন লিওনার্দোর মা।
লেওনার্দো সম্পর্কে সারা বিশ্বে আলোচনার শেষ নেই। চিত্রাকররা তার নানা আলোচনা সমালোচনায় মুখর থাকে। তবুও এখনো পুরোপুরি তাকে জানতে পারেনি অনেকে। অনেকটা রহস্যময় থাকা লেওনার্দো বীণা বাজানোয় পারদর্শী ছিলেন ভিঞ্চি। কেউ কেউ মনে করেন, ভিঞ্চি আসলে ‘মোনা লিসা’ এঁকেছেন নিজের আত্মপ্রতিকৃতির আদলে। ভিঞ্চি সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত বাঁহাতি। নোটবইয়ে সবকিছু লিখতেন উল্টো করে। কারও কারও অনুমান, এসব তিনি করেছেন তাঁর আবিষ্কার গোপন রাখার স্বার্থে। কেউ বলেন, চার্চের সঙ্গে বিরোধ বাধবে, এই আশঙ্কায়। রাতদুপুরে কবরখানায় ঢুকে লাশ কেটে দেখতেন। লিখে ও এঁকে রাখতেন চোখের গঠন, হাড়ের বিন্যাস, ভ্রূণের অবস্থা, রক্তসঞ্চালনের উপায়। আর খুঁজতেন, আত্মা কোথাও থাকে কি না।
বিচিত্র কৌতূহল ও মুদ্রাদোষ এবং প্রাণী-মানুষ-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের কিম্ভূত কাজকারবারের জন্য লেওনার্দোর চারপাশ ঘিরে আছে রহস্যের ঘন কুয়াশায়। কিন্তু বিখ্যাত মানুষটির আসল কীর্তির কথা তো বলাই হয়নি এখনো। লেওনার্দো দা ভিঞ্চি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম চিত্রকরদের একজন। নোটবইয়ের এক জায়গায় লেওনার্দো লিখেছেন, ‘ছবি আঁকা কখনো শেষ হয় না, আঁকা একসময় ছেড়ে দিতে হয়।’ তাঁর এ কথা ভিন্নতর অর্থে ফিরে এসেছে তাঁর নিজের জীবনে।
তাঁর বিখ্যাত মুদ্রাদোষ ছিল ছবি অসমাপ্ত রেখে দেওয়া। বহু চিত্রকর্ম তিনি আঁকতে শুরু করেছেন, কিন্তু শেষ করেননি। তাঁর সম্পূর্ণ চিত্রকর্মের সংখ্যা মাত্র ১৫টির মতো। এই সামান্য কয়টি চিত্রকর্মই তাঁকে আকাশচুম্বী খ্যাতি দিয়েছে।
আনুমানিক ১৪৬৯ সালে রেনেসাঁসের অপর বিশিষ্ট শিল্পী ও ভাস্কর আন্দ্রেয়া ভেরোচ্চিয়োর কাছে ছবি আঁকায় ভিঞ্চির শিক্ষানবিশ জীবনের সূচনা। এই শিক্ষাগুরুর অধীনেই তিনি ১৪৭৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে, বিশেষত চিত্রাঙ্কনে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। ১৪৭২ সালে তিনি চিত্রশিল্পীদের গীল্ডে ভর্তি হন এবং এই সময় থেকেই তাঁর চিত্রকর জীবনের সূচনা হয়।
বিশ্বশ্রেষ্ঠ চিত্রকর্মের মধ্যে আছে তাঁর ‘দ্য লাস্ট সাপার’ আর ‘মোনা লিসা’। ‘মোনা লিসা’র হাসি সবার কাছে চির-রহস্যের উত্স। ‘ভিত্রুভিয়ান ম্যান’ এমন এক সাংস্কৃতিক আইকন, যা ইয়োরো থেকে টি-শার্টে ফিরে ফিরে আসছে নানা নতুন চেহারায়। ড্যান ব্রাউন যে ‘দা ভিঞ্চি কোড’ বইটি লিখে বছর কয়েক আগে দুনিয়া মাতালেন, তারও কেন্দ্রে লেওনার্দোর রহস্যমাখা চিত্রকর্ম। লেওনার্দো এখনো এমন প্রবলভাবে বারবার ফিরে আসছেন, যেন তিনি এ সময়েরই শিল্পী। লেওনার্দো দা ভিঞ্চির মতো মানুষের একবার জন্ম হলে আর মৃত্যু হয় না। বিবরণ দিতে গিয়েই তৈরি হয়েছিল ‘রেনেসাঁ-মানব’ শব্দটি। তবু রেনেসাঁর প্রতীক।
এই রেনেসা মানব ২ মে ১৫১৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
মহারানি ভিক্টোরিয়া
মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের রানি হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার পর ভিক্টোরিয়ার প্রথম কাজ ছিল মায়ের কক্ষ থেকে নিজের বিছানা সরিয়ে আনা। মহারানি ভিক্টোরিয়ার মাতৃভাষা কিন্তু ইংরেজি ছিল না। তার মা ছিলেন একজন জার্মান ডিউকের কন্যা যিনি ঘরে সবসময় জার্মান ভাষায় কথা বলতেন। যদিও ভিক্টোরিয়া ৬৪ বছর ইংল্যান্ড শাসন করেছেন, তিনি খুব ভালোভাবে ইংরেজি বলতে পারতেন না। প্রিন্স কনসর্ট মারা যাওয়ার পর চলি্লশ বছর ধরে মহারানি ভিক্টোরিয়ার একটা নির্দেশ প্রতিপালিত হয়েছে। ভিক্টোরিয়ার নির্দেশ ছিল, প্রতি সন্ধ্যায় উইন্ডসর ক্যাসেলে রাজপুত্রের বিছানায় তার পোশাক নতুনভাবে রাখতে হবে।
Collected
ভাই, ভাল লিখেছেন, শুভেচ্ছা রইল।
ReplyDeleteআশা করি, ভবিষ্যতে আরো তথ্য যোগ করবেন।
আর, গুগলে নিন্মের সাইটটিতে ও আপনারউপকার হবে ।