Tuesday, August 28, 2012

ধর্মের যে বিষয়গুলো এখন প্রায় সবার কাছে গ্রহনযোগ্য হয়ে গেছে

১. ছোটবেলায় মসজিদের হুজুরের কাছে শুনতাম টিভি হল শয়তানের বাক্স, এমনও বলতেন টিভি দেখা হারাম কেননা সেখানে মানুষ সহ বিভিন্ন প্রাণীর ছবি দেখানো হয়। ইসলামে প্রাণীর ছবি আঁকা নিষেধ।
কিন্তু এখন প্রায় সব মাওলানা টিভি দেখেন। টিভিতে কোরআন তেলাওয়াত সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এমনকি কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় মাদ্রাসার ছাত্ররা অংশগ্রহণ করে।
তাই এখন আর আগের মতন মসজিদের হুজুররা টিভিকে শয়তানের বাক্স বলেন না। বিজ্ঞানের এই আবিস্কার আমাদের সমাজের প্রায় সবার কাছে গ্রহনযোগ্য হয়ে গেছে বলা যায়।
২. ছোটবেলায় আমাদের পাশের গ্রামে কয়েকজন ঠাকুরকে দেখতাম উনারা খালের ঘাটে গোসল করে বাড়ি ফেরার সময় খুব সাবধানে যেতেন, কোন মুসলমানের ছায়া মাড়াতেন না।
কিন্তু এখন উনারা মুসলমানের সাথেই এক ঘাটে গোসল করে একসাথে বাড়ি ফিরে পূজা আহ্নিক সারেন।
অনেক মুসলমান বাবা মা হিন্দুর হাতের বানানো কিছু নিজেরাও খেতেন না এবং পিচ্চি বাচ্চাদেরও খেতে দিতেন না যদিও বাচ্চারা কান্নাকাটি করত। কিন্তু এখন হিন্দুরাও মুসলমানের হাতের রান্না খায় আর মুসলমানও হিন্দুর হাতের বানানো জিনিস খায়।
লালনের গানের জয় হয়েছে- জাতের কিবা আসে যায়।
দেশে কোন হোটেলে খাওয়ার সময় চিন্তা করে না হোটেলের লোকজন কি হিন্দু নাকি মুসলমান তবে যখন বাংলাদেশী মুসলমানরা বিদেশে যায় তখন তারা খোঁজে মুসলিম রেস্টুরেন্ট আর হালাল খাবার। আর এটাই বিভিন্ন কোম্পানী কাজে লাগায়- তারা হালাল মুরগি, হালাল গরু এমনকি গরুর দুধের প্যাকেটের গায়ে হালাল চিহ্ন লাগায়। এই সব বড় কোম্পানীগুলো মেশিনের মাধ্যমে গরুর দুধ দহন করে, মেশিনে গরু জবেহ করে, তারা তো আর আল্লাহু আকবার বলে নিজের হাতে গরু জবেহ করে না।
বিজনেস এ যে marketing/advertising এর জয় হয়েছে।
আমি যেখানে আছি সেখানে কিছু পাকিস্তানী ফ্যামিলি আছে, এদের মধ্যে প্রায়ই ক্যাচাল হয়- KFC তে খাওয়া নিয়ে, কেউ বলে জায়েজ, কেউ না। কিন্তু যখন কোথাও ট্যুরে যায় তখন ঠিকই KFC তে খায় কারন চীনের সব জায়গায় KFC এর দামের রেট এক। মুসলিম রেস্টুরেন্ট গুলোতে খেতে গেলে অনেক খরচ পড়ে।
টাকার মায়া বড় মায়া, টাকা সেভ করার জন্য সবই জায়েজ হয়ে যায়।
৩. ছোটবেলায় আমি যে হুজুরের কাছে ছিপারা [আমপারা] পড়তাম উনি বলতেন মানুষের ছবি তোলা নিষেধ।
কিন্তু এখন মানুষ হজ্জ করতে যাওয়ার সময় ছবি তোলে পাসপোট করে, এমনকি হজ্জের অনুষ্ঠান যখন বিভিন্ন টিভি চ্যানেল লাইভ দেখায় তখন হাজ্জীরা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকে, হাত নাড়েন।
ঐসময় দেখতাম শুধু বয়স্ক মানুষজন হজ্জে যেতেন কারন তারা মনে করতেন হজ্জ থেকে ফেরত আসার পর আর পাপ কাজ করা যাবে না, জমির আইল কেটে জমির পরিমান বাড়ানো যাবে না। কারন তখন কোন হাজ্জী সাহেব পাপ কাজ করলে সেটা নিয়ে মানুষজন অনেক কানাঘুষা করত।
কিন্তু এখন মানুষ যুবক বয়সেও হজ্জ করতে যায় আর ফিরে এসে হাজ্জী সাহেবরা পাপ কাজ করলেও সেটা নিয়ে মানুষজন বেশি একটা কানাঘুষা করে না। ব্যাপারটা সবার কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
৪. পরনারী দেখা নিষেধ। ছোটবেলায় দেখতাম যখন মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন সাহেবদের বাসায় দাওয়াত দেওয়া হত তখন আম্মা পাশের রুমে আমার হাতে খাবার দিতেন আমি হুজুরের সামনে নিয়ে যেতাম।
কিন্তু এখন মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন সাহেবদের মহিলারাই বেড়ে খাওয়ান এবং মসজিদের কালেকশনের টাকা, মুষ্টি চাল আগে ছোট বাচ্চাদের হাত থেকে নিলেও এখন মহিলাদের হাত থেকে নেওয়া, তাদের সাথে কথা বলা স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
মসজিদের ইমাম সাহেব বলতেন পরনারীর কন্ঠ যদি সুরেলা হয় তাহলে পরপুরুষের জন্য তা শোনা নিষেধ, এমনকি মহিলারা পরপুরুষের সাথে বেসুরো গলায় কথা বলবে। কিন্তু এখন ইসলামী হামদ্ নাত গজল মহিলাদের সুরেলা কন্ঠে শুনতে অনেক ভালো লাগে আর তাইত বিভিন্ন ইসলমী অনুষ্ঠানে এখন নারীদের দিয়েই ইসলামী গান গাওয়ানো হয়।
নারী পুরুষ ভেদাভেদ ভুলে সবারই সবার সাথে কথা বলার অধিকার আছে।
৫. আগে মহিলাদের দেখতাম পুরুষ ডাক্তারের কাছে যেতে চাইতেন না, তাদের স্বামীরাও তাদের জন্য মহিলা ডাক্তার খুঁজত বিশেষ করে গাইনী।
কিন্তু এখন নারীরা আর পুরুষ ডাক্তারের কাছে যেতে সংকোচ করেন না।
সেবক ই বড় কথা- সে পুরুষ নাকি নারী তাতে কি এসে যায়।
৬. আগে বাড়ির মেয়েদের চাকুরী করাটা লোকজন খারাপভাবে নিত, বাড়ির মেয়ে বাইরে কাজ করলে ফিৎনা, জিনাহ্ ধর্মের ক্ষতি করবে। বিশেষ করে এনজিওতে গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক এগুলোই প্রথমদিকের এনজিও।
তাই অনেক মেয়েরা আগে পড়ালেখা করলেও এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা নিলেও চাকুরী করতেন না।
কিন্তু এখন পুরুষরা একজন অন্যজনকে জিজ্ঞেস করে আপনার গিন্নী কি করে? অভিভাবকরা জিজ্ঞেস করে বৌমা কি করে গো!!!
সবারই কাজ করার প্রতিভা আছে, লিঙ্গভেদে কি এসে যায়।
৭. আগে হুজুররা ওয়াজ করতেন পর্দা বলতে বোঝায় মুখমন্ডল সহ পুরো শরীর ঢাকা, মুখের সামনে আলাদা করে নেটের মত আলদা কাপড় দেওয়া যেন চোখ দেখা না যায়, হাতমোজা, পা মোজা অবশ্যই।
কিন্তু এখন অধিকাংশ মাওলানা সাহেবদের স্ত্রীরাও শুধু মুখমন্ডল ঢাকেন, চোখ ঢাকেন না। এমনকি মহিলা হাফেজ যারা আছেন তারাও না।
আগে যারা মাথার উপর কাপড় টেনে শুধু ঘোমটা দিত কিন্তু মুখমন্ডল ঢাকত না তাদেরকে বেপর্দা মহিলা বলা হত। আগে যারা এনজিওতে চাকুরী করত তারা মাথার উপর উড়না টেনে দিত কিন্তু তখন তাদেরকে বেপর্দা মহিলাই বলা হত কিন্তু এখন যারা মাথার উপর উড়না টেনে রাখে কিংবা বোরকা পরে মুখমন্ডল উন্মুক্ত রাখে, হাতমোজা, পা মোজা পড়ে না তারপরও তাদেরকে পর্দানশীল নারীই বলা, বেপর্দা মহিলা বলা হয় না।

সময় বহমান, এর সাথে সবকিছুই গতিশীল, সমাজ, মানুষও ব্যতিক্রম নয়। তাই আজ যেটা গ্রহণযোগ্য নয়, লোকজন খারাপ চোখে দেখে সেটাই হয়ত একদিন সবার কাছে গ্রহনযোগ্য হয়ে যাবে।

No comments:

Post a Comment

ওয়ানপ্লাসের নতুন অক্সিজেন ওএস ১৫ আসছে AI নিয়ে

  অ্যান্ড্রয়েড ১৫  এর ওপর ভিত্তি করে আসছে  ওয়ানপ্লাসের  অক্সিজেন    ওএস  ১৫। অক্টোবরের ২৪ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত ৯:৩০ এ আনুষ্ঠানিকভাবে অপ...